বাঙালি দর্শনের বিকাশে পুরাণের ভূমিকা সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, বাঙালি দর্শনের বিকাশে পুরাণ কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে?
অথবা, বাঙালি দর্শনের ক্রমবিকাশে পূরাণের অবদান কী?
অথবা, “বাঙালির দর্শনের ক্রমবিকাশের ধারায় পুরাণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে- উক্তিটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাঙালি দর্শনে পুরাণের প্রভাব সম্পর্কে যা যান লেখ।

উত্তর।৷ ভূমিকা : বাঙালি দর্শন অতি প্রাচীন দর্শন। বাঙালি দর্শন বলতে বাঙালির ধ্যানধারণা, চিন্তামনন,ভাবধারা, মতামত, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি প্রভৃতিকে বুঝায়। বিভিন্ন যুগে বাঙালি দর্শন বিকাশে বিভিন্ন উপাদান প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থ তার মধ্যে অন্যতম। বাঙালি দর্শনের বিকাশে বেদ,গীতা, মহাভারত, পুরাণ, মনুসংহিতা, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র প্রভৃতি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
বাঙালি দর্শনের বিকাশে পুরাণের ভূমিকা : ভারতীয় ধর্ম দর্শ, সংস্কৃতির ইতিহাসে পুরাণ অতি প্রাচীন গ্রন্থ। পুরাণে নানারকম আখ্যানের মাধ্যমে ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক তথা সমগ্র মানব পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বাঙালি দর্শনের বিকাশে পুরাণের অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। যথা :
১. দেশপ্রেম ও চরিত্র গঠন : পুরাণে দেশপ্রেম ও চরিত্র গঠনের বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। বিভিন্ন পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ লীলা, দেশের সীমারেখা, সমাজতন্ত্রের পন্থা প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা ও ব্যাখ্যা রয়েছে। ভাগবত পুরাণ ও বিষ্ণু পুরাণে দেশপ্রেম ও চরিত্র গঠনের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা রয়েছে।
২. ব্রহ্ম, পরমাত্মা ও বিষ্ণু অভিন্ন : উপনিষদ ও ব্রহ্মসূত্রে বর্ণিত ব্রহ্ম ও পরমাত্মার সাথে পুরাণে বর্ণিত বিষ্ণু অভিন্ন।বিষ্ণু এক, অনন্ত, নিত্য, অপরিণামী, পরিপূর্ণ, সর্বব্যাপী ও সর্বাতীত। মানব বুদ্ধির মাধ্যমে তার স্বরূপে প্রবেশ করা যায় না।
৩. মানুষের গুরুত্ব : সব শাস্ত্রের মূল আলোচ্যবিষয়ই হলো মানুষ। পুরাণের আলোচনাও জগতে মানুষের অবস্থান,মানুষের স্বরূপ ও প্রকৃতি, মানুষের লক্ষ্য ও পরিণতি প্রভৃতি সম্পর্কিত প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।
৪. বিষ্ণু পুরাণ : বিষ্ণু পুরাণ সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও সহজবোধ্য পুরাণ। একে অন্যান্য পুরাণের প্রতিনিধিত্বকারী পুরাণ বলা হয়। বাঙালি দর্শন চর্চায় বিষ্ণু পুরাণ প্রামাণ্য গ্রন্থ বলে বিবেচিত হয়।
৫. ভাগবত পুরাণ : বিষ্ণু পুরাণ ও ভাগবত পুরাণ একই প্রকৃতির। বিষ্ণু পুরাণের মতো ভাগবত পুরাণেও মানুষের স্বরূপ, লক্ষ্য, পরিণতি প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ভাগবতে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষকে শ্রেষ্ঠ জীব বলা হয়েছে।
৬. পরমাত্মার প্রকাশ : ভাগবত পুরাণে জগতের সকল বস্তুকে পরমাত্মার প্রকাশ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই সকল বস্তুর প্রতি শ্রদ্ধা রাখা আবশ্যক। পরমাত্মার অলৌকিক ক্ষমতাবলে বিভিন্নরূপে ধরাধামে অবতরণ করেন এবং মানবকল্যাণে কর্ম করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, পুরাণে আমরা মানবকল্যাণে নিবেদিত বিষ্ণুর প্রতিটি কর্মে তাঁর (ভগবানের) সৌন্দর্য, কল্যাণায়ত্ব, প্রেম ও করুণা এবং বিশুদ্ধি ও ক্রীড়াশীলতার এক অনুপম নিদর্শন লক্ষ করি। এভাবেই প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে মানুষের সার্বিক দিক ব্যাখ্যায় পুরাণ অসামান্য ভূমিকা রেখেছে। তাই বাঙালি দর্শনে পুরাণের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/