প্রাচীন যুগের বাঙালি দার্শনিকদের দর্শনতত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, প্রাচীন যুগের বাঙালি দর্শনের পরিচয় দাও।
অথবা, প্রাচীন যুগের বাঙালি দর্শনের প্রকৃতি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, প্রাচীনকালের বাঙালি দর্শনের স্বরূপ তুলে ধর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাঙালির দর্শনচিন্তার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীনকাল থেকে বাঙালি বিজাতি ও বিদেশি শাসন কর্তৃক শাসিত হলেও নিজস্ব মনন সাধনার ব্যাপারে ছিল স্বতন্ত্র। অন্যান্য প্রাগ্রসর জাতির মতো বাঙালি দর্শনও ইতিহাসের বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে বিকশিত হয়েছে। অনেক পণ্ডিত বাঙালি দর্শনের প্রাথমিক স্তরকে প্রকৃত দর্শন হিসেবে স্বীকার করেন না। তবে সার্বিক বিচারে তাদের আপত্তি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় না।
প্রাচীন যুগের বাঙালি দর্শনতত্ত্ব : প্রাচীন বাঙালি দর্শন বলতে খ্রিস্টপূর্ব থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়কালকে বুঝানো হয়। প্রাচীন কালের বাঙালি দর্শন পর্যালোচনা করলে এর কতকগুলো বিশেষ দিক লক্ষ করা যায়। যথা :
১. বস্তুবাদী চিন্তারা : প্রাচীন বাংলায় যে দর্শন চর্চা হতো তার নাম লোকায়ত দর্শন। এরা বস্তুবাদী এবং প্রত্যক্ষণকে জ্ঞানের উৎস বলে মনে করতো। সাধারণের নিকট এ দর্শন জনপ্রিয় হওয়ায় একে লোকায়ত বলা হয়। এদের চার্বাক সম্প্রদায় বলেও অভিহিত করা হয়।
২. ভাববাদী চিন্তাধারা : প্রাচীন যুগে বাঙালি দর্শনে বস্তুবাদী চিন্তাধারার পাশাপাশি ভাববাদী চিন্তাধারাও প্রচলিত ছিল। অনার্য এবং আর্য উভয় জাতি গোষ্ঠীই পারলৌকিক কল্যাণের জন্য তপস্যা বা উপাসনা করতো। বাঙালি ধর্ম ও সংস্কৃতিতে পূজার্চনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন অধ্যাত্মবাদ বা ভাববাদের চর্চারই বহিঃপ্রকাশ।
৩. বিভিন্ন দার্শনিক সম্প্রদায় : বৈদিক সাহিত্য বা বেদের দার্শনিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আস্তিক ও নাস্তিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এসব দার্শনিক সম্প্রদায়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ তথা দর্শনচর্চা বাঙালি দর্শনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
৪. বাঙালি পণ্ডিত বা দার্শনিকবৃন্দ : প্রাচীন বাঙালি দর্শনে সংস্কৃত ভাষার প্রাধান্য থাকায় বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতির দার্শনিক ও পণ্ডিতগণের সাক্ষাত মেলে, এদের মধ্যে বাঙালি ও অবাঙালি উভয়ই রয়েছে। বাঙালি দার্শনিকগণ কাব্যের মাধ্যমে দর্শনচর্চা করতেন। প্রাচীন বাঙালি দার্শনিকদের মধ্যে শীলভদ্র, শান্তিদেব, শান্তরক্ষিত, জ্ঞানশ্রী মিত্র, অভয়কর গুপ্ত, দিবাকর চন্দ্র, দানশীল, কুমার বজ্র, বিভূতি চন্দ্র, বোধিভদ্র, প্রজ্ঞাবর্মা, মোক্ষকর গুপ্ত, পুণ্ড্ররীক, বিরূপা, জলন্ধরীপা, গুগুরীপা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। বাঙালি চিন্তাচেতনার বিকাশ ও দর্শন চর্চায় তাদের অসামান্য অবদান রয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, প্রাচীনকালে বাঙালি দর্শন মুক্ত ও স্বাধীনভাবে বিকাশ লাভ করেছে। বিকাশের ধারায় মুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনা। ফলে বাঙালি জাতির মতো বাঙালি দর্শনও সমন্বয়ধর্মী রূপ পরিগ্রহ করেছে। অনেক প্রাচীন গ্রন্থে বাঙালির মনন-সাধনার তথা দর্শন চর্চার প্রমাণ পাওয়া যায়, যা সমৃদ্ধ দার্শনিক ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/