বাংলার বারো ভূঁইয়া কারা ছিলেন? তাদের দমনে সুবেদার ইসলাম খানের ভূমিকা নিরূপণ কর।

উত্তর ভূমিকা: বারো ভূঁইয়া হলেন বাংলার শক্তিশালী জমিদারগণ। জমিদারগণ তাদের নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীন ও শক্তিশালী ছিলেন। তাদের দমনে মুঘলরা অনেকবার ব্যর্থ হন। তবে
১ সম্রাট জাহাঙ্গীরের সুবেদার ইসলাম খান বারো ভূঁইয়াদের কঠোর হস্তে দমন করেন এবং বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
২ সুবেদার ইসলাম খান বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
→ বাংলার বারো ভূঁইয়াদের পরিচয় : বারো ভূঁইয়া বাংলার স্থানীয় প্রধান ও জমিদার যারা আকবর ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মুঘল বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বারো
ভূঁইয়া শব্দটির অর্থ বারোজন ভূঁইয়া। প্রকৃতপক্ষে বাংলার আফগান শাসনামল ও মুঘল শক্তির উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে
এদেশের বিভিন্ন এলাকা বহু সামরিক পাঠান, ভূঁইয়া এবং জমিদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তারা মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলত। অনেকেই মনে করেন যে, বারো ভূঁইয়া
শব্দটি নির্ভুলভাবে বারোজন ভূঁইয়াকে বুঝায় না, বরং বহু সংখ্যক বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হিন্দুদের কাছে বারো সংখ্যাটি
পবিত্র ছিল। আবুল ফজল ও মির্জা নাথালের মতে বারো ভূঁইয়াগণ যথাযথভাবে আলোচিত বিষয়। তাঁরা উভয়ে বারো ভূঁইয়াকে বুঝাতে সংখ্যাসূচক বারো শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ
থেকে বোঝা যায় বারো ভূঁইয়া শব্দটি কোনো নাম নয় বরং এটি ভূঁইয়াদের সঠিক সংখ্যা নির্দেশ করে। ঈসা খান, মুসা খান,
কেদার রায়, চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্য, বাহাদুর গাজি, সোনা গাজি, অনন্ত মানিক্য, ওসমান খান লোহানী, রাজা সত্যজিৎ, রঘুনাথ,
কন্দর্প নারায়ণ, রামচন্দ্র ইত্যাদি বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
বাংলার বারো ভূঁইয়াদের দমনে ইসলাম খান : ইসলাম খান ছিলেন বাংলার সুবেদার। তিনি ছিলেন বীর সৈনিক, সুদক্ষ রণকুশলী এবং বিচক্ষণ রাজনীতিক। নিম্নে বারো ভূঁইয়াদের
দমনে ইসলাম খানের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. ক্ষমতা গ্রহণ : বাংলায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ইসলাম খান চিশতি ছিলেন ফতেহপুর সিক্রির শেখ সেলিম চিশতির দৌহিত্র। ইসলাম খান ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল বিদ্রোহ দমন করার পদক্ষেপ নেন।
২. বীর হামির, সেলিম খান ও শামস খানকে দমন : ইসলাম খান ক্ষমতা লাভ করেই প্রথমে বিদ্রোহী বার ভূঁইয়া বীর আমির সেলিম খান ও শামস খানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। এরা ছিলেন শক্তিশালী জমিদার। ইসলাম খান এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে এসব জমিদার মুঘল বশ্যতা মেনে নেন।
৩. প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম খান : ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসলাম খান বুঝতে পারেন মুসা খানকে দমন করতে পারলে অন্যান্য জমিদারদের সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই তিনি নৌবাহিনী প্রস্তুত করেন রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকার স্থানান্তর করেন। ইসলাম খান সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট পৌছলে রাজা প্রতাপাদিত্য স্বেচ্ছায় মুঘল আধিপত্য মেনে নেন।
৪. মুসা খানকে দমন : বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে শক্তিশালী ছিলেন মুসা খান। ইসলাম খান মুসা খানকে পরাজিত করার জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাজমহল হতে ভাটি অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হন। যাত্রাপুর দুর্গ মুঘলদের অধিকারে আসে। এরপর
ইসলাম খান মুসা খানের রাজধানী সোনারগাঁও আক্রমণ করেন। এতে মুসা খান ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
৫. অনন্ত মানিক্যকে দমন : ভুলুয়ার জমিদার ছিলেন অনন্ত মানিক্য। ইসলাম খান অনন্ত মানিক্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে অনন্ত মানিক্য পরাজিত হন ও মুঘল আধিপত্য মেনে নেন।
৬. ওসমান খানকে দমন : ইসলাম খান, ওসমান খানকে দমন করার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠান। ওসমান খান প্রচণ্ড বিরোধ গড়ে তুলেন। ইসলাম খান ওসমান খানের রাজাধানী বুকাইনগর অধিকার করেন। অবশেষে ওসমান খান মুঘল বাহিনীর নিকট
আত্মসমর্পণ করেন।
৭ . প্রতাপ রায়কে দমন : ইসলাম খান ১৬১৩ সালে কোহার রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। রাজা ছিলেন প্রতাপ
রায় ইসলাম খানের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রতাপ রায় মুঘল বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে বাংলার সুবাদার ইসলাম খান বিচক্ষণতা ও অপূর্ব সামরিক নৈপুণ্যের
সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলার প্রভাবশালী জমিদারদের দমন করে বাংলায় মুঘল শাসনকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। বারো ভূইয়াদের দমন করার জন্য ইসলাম খান নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করেন। ইসলাম খান ছিলেন সুচতুর ও বিচক্ষণ নেতা।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae-2/

বাংলার বারো ভূঁইয়া কারা ছিলেন? তাদের দমনে সুবেদার ইসলাম খানের ভূমিকা নিরূপণ কর।

উত্তর ভূমিকা: বারো ভূঁইয়া হলেন বাংলার শক্তিশালী জমিদারগণ। জমিদারগণ তাদের নিজ নিজ এলাকায় স্বাধীন ও শক্তিশালী ছিলেন। তাদের দমনে মুঘলরা অনেকবার ব্যর্থ হন। তবে
১ সম্রাট জাহাঙ্গীরের সুবেদার ইসলাম খান বারো ভূঁইয়াদের কঠোর হস্তে দমন করেন এবং বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
২ সুবেদার ইসলাম খান বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
→ বাংলার বারো ভূঁইয়াদের পরিচয় : বারো ভূঁইয়া বাংলার স্থানীয় প্রধান ও জমিদার যারা আকবর ও জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে মুঘল বিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বারো
ভূঁইয়া শব্দটির অর্থ বারোজন ভূঁইয়া। প্রকৃতপক্ষে বাংলার আফগান শাসনামল ও মুঘল শক্তির উত্থানের মধ্যবর্তী সময়ে
এদেশের বিভিন্ন এলাকা বহু সামরিক পাঠান, ভূঁইয়া এবং জমিদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তারা মুঘলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলত। অনেকেই মনে করেন যে, বারো ভূঁইয়া
শব্দটি নির্ভুলভাবে বারোজন ভূঁইয়াকে বুঝায় না, বরং বহু সংখ্যক বুঝাতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়। হিন্দুদের কাছে বারো সংখ্যাটি
পবিত্র ছিল। আবুল ফজল ও মির্জা নাথালের মতে বারো ভূঁইয়াগণ যথাযথভাবে আলোচিত বিষয়। তাঁরা উভয়ে বারো ভূঁইয়াকে বুঝাতে সংখ্যাসূচক বারো শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ
থেকে বোঝা যায় বারো ভূঁইয়া শব্দটি কোনো নাম নয় বরং এটি ভূঁইয়াদের সঠিক সংখ্যা নির্দেশ করে। ঈসা খান, মুসা খান,
কেদার রায়, চাঁদ রায়, প্রতাপাদিত্য, বাহাদুর গাজি, সোনা গাজি, অনন্ত মানিক্য, ওসমান খান লোহানী, রাজা সত্যজিৎ, রঘুনাথ,
কন্দর্প নারায়ণ, রামচন্দ্র ইত্যাদি বারো ভূঁইয়া নামে পরিচিত।
বাংলার বারো ভূঁইয়াদের দমনে ইসলাম খান : ইসলাম খান ছিলেন বাংলার সুবেদার। তিনি ছিলেন বীর সৈনিক, সুদক্ষ রণকুশলী এবং বিচক্ষণ রাজনীতিক। নিম্নে বারো ভূঁইয়াদের
দমনে ইসলাম খানের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. ক্ষমতা গ্রহণ : বাংলায় মুঘল আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য সম্রাট জাহাঙ্গীর ইসলাম খানকে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত করেন। ইসলাম খান চিশতি ছিলেন ফতেহপুর সিক্রির শেখ সেলিম চিশতির দৌহিত্র। ইসলাম খান ক্ষমতা গ্রহণের পর সকল বিদ্রোহ দমন করার পদক্ষেপ নেন।
২. বীর হামির, সেলিম খান ও শামস খানকে দমন : ইসলাম খান ক্ষমতা লাভ করেই প্রথমে বিদ্রোহী বার ভূঁইয়া বীর আমির সেলিম খান ও শামস খানের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন। এরা ছিলেন শক্তিশালী জমিদার। ইসলাম খান এদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলে এসব জমিদার মুঘল বশ্যতা মেনে নেন।
৩. প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে ইসলাম খান : ক্ষমতা গ্রহণের পর ইসলাম খান বুঝতে পারেন মুসা খানকে দমন করতে পারলে অন্যান্য জমিদারদের সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই তিনি নৌবাহিনী প্রস্তুত করেন রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকার স্থানান্তর করেন। ইসলাম খান সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট পৌছলে রাজা প্রতাপাদিত্য স্বেচ্ছায় মুঘল আধিপত্য মেনে নেন।
৪. মুসা খানকে দমন : বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে শক্তিশালী ছিলেন মুসা খান। ইসলাম খান মুসা খানকে পরাজিত করার জন্য বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রাজমহল হতে ভাটি অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হন। যাত্রাপুর দুর্গ মুঘলদের অধিকারে আসে। এরপর
ইসলাম খান মুসা খানের রাজধানী সোনারগাঁও আক্রমণ করেন। এতে মুসা খান ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
৫. অনন্ত মানিক্যকে দমন : ভুলুয়ার জমিদার ছিলেন অনন্ত মানিক্য। ইসলাম খান অনন্ত মানিক্যদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। যুদ্ধে অনন্ত মানিক্য পরাজিত হন ও মুঘল আধিপত্য মেনে নেন।
৬. ওসমান খানকে দমন : ইসলাম খান, ওসমান খানকে দমন করার জন্য সৈন্যবাহিনী পাঠান। ওসমান খান প্রচণ্ড বিরোধ গড়ে তুলেন। ইসলাম খান ওসমান খানের রাজাধানী বুকাইনগর অধিকার করেন। অবশেষে ওসমান খান মুঘল বাহিনীর নিকট
আত্মসমর্পণ করেন।
৭ . প্রতাপ রায়কে দমন : ইসলাম খান ১৬১৩ সালে কোহার রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। রাজা ছিলেন প্রতাপ
রায় ইসলাম খানের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রতাপ রায় মুঘল বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে বাংলার সুবাদার ইসলাম খান বিচক্ষণতা ও অপূর্ব সামরিক নৈপুণ্যের
সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলার প্রভাবশালী জমিদারদের দমন করে বাংলায় মুঘল শাসনকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। বারো ভূইয়াদের দমন করার জন্য ইসলাম খান নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করেন। ইসলাম খান ছিলেন সুচতুর ও বিচক্ষণ নেতা।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a6%9e%e0%a7%8d%e0%a6%9a%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ae%e0%a7%81%e0%a6%98%e0%a6%b2-%e0%a6%86%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ae-2/