বাংলার ঊনবিংশ শতাব্দীর ধর্মচর্চার উপরে যে একটা মধ্যযুগীয় ছাপমারা রয়েছে তা আমরা দেখেছি।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত কাজী আবদুল ওদুদের ‘বাংলা জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ঊনবিংশ শতাব্দীর ধর্মচর্চার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে প্রবন্ধকার উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : রাজা রামমোহন হিন্দুধর্মের যে সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাঁর মৃত্যুর পর তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রামমোহনের পরে ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্ব দেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অক্ষয়কুমার দত্ত। অক্ষয়কুমার দত্ত জ্ঞান ও কর্মের উপর গুরুত্ব দিলেও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর গভীরভাবে অধ্যাত্মবাদে বিশ্বাস করতেন। ‘আত্মপ্রত্যয় সিদ্ধ বিশুদ্ধ হৃদয়’ অক্ষয়কুমারের ভিতর দিয়ে উৎসারিত এ আধুনিক মনোভাবকে তিনি শ্রদ্ধার চোখে দেখতে পারেননি। আধুনিক জীবনোপযোগী জ্ঞানানুরাগ সমৃদ্ধ জীবনযাপন করলেও বৃদ্ধ বয়সে তিনি ভাবের আতিশয্যে নৃত্য করেছেন। এটি মধ্যযুগীয় ভক্তিরই নিদর্শন। ব্রাহ্মসমাজের পরবর্তী নেতা কেশবচন্দ্র ভাবের দিক থেকে দেবেন্দ্রনাথেরই মানসপুত্র ছিলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসতো ভাবের আতিশয্যে বলেই ফেললেন ‘যত মত তত পথ’। রামকৃষ্ণের এ ধর্মমতকেই আমরা হিন্দুচিত্তের উপর বেশি করে ক্রিয়াশীল দেখতে পাই। এভাবে মধ্যযুগীত্বই সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের মাধ্যমে ঘুরে ফিরে এসেছে। শেষ পর্যন্ত হিন্দু জনসাধরণের কাছে প্রতিপন্ন হয়েছে পৌরাণিক ধর্মের কিছুই বাজে নয়। তারই পরতে পরতে রয়েছে উপনিষদের ব্রাহ্মবাদ, হয়তো বা তার চাইতেও ভালো কিছু।
মন্তব্য : ঊনবিংশ শতাব্দীর ধর্মচর্চা মধ্যযুগীয় প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কেননা নেতৃত্বদানকারীরা কেউই সম্পূর্ণভাবে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নিতে পারেনি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0%e0%a6%a3-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%80-%e0%a6%86/