অথবা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সমস্যাসমূহ চিহ্নিত কর।
অথবা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকারের অসুবিধাসমূহ লিখ।
অথবা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকারের নেতিবাচক দিকগুলো কী কী?
অথবা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সমস্যাগুলো কী কী?
অথৰা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের অন্তরায়সমূহ লেখ।
উত্তর।। ভূমিকা : বাংলাদেশে সমাজকর্ম একটি পেশা হিসেবে ভালোভাবে বিকাশ লাভ করেনি। কিন্তু বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচি পরিচালনা ও গবেষণার প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় যা কি না ব্যক্তি সমাজকর্মের সাক্ষাৎকার পদ্ধতি অনুসরণ করে।
বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের সীমাবদ্ধতা : এদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণে বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এ সীমাবদ্ধতাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সমাজকর্ম পেশার স্বীকৃতির অভাব : বাংলাদেশে সমাজকর্ম এখনো পেশা হিসেবে স্বীকৃতি ও প্রসার লাভ করে নি। ফলে সমাজকর্মী যখন সাক্ষাৎকার গ্রহণে যায়, মানুষ তা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে না। সমাজকর্মের পেশাদার স্বীকৃতি নেই বলে মানুষ সমাজকর্মীর সাক্ষাৎকারের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা রাখে না। ফলে দায়সারাভাবে সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে যথাযথভাবে সাক্ষাৎকার গ্রহণ সম্ভব হয় না।
২. সমাজকর্মীর জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাব : সমাজকর্ম পেশার স্বীকৃতি নেই বলে এদেশে সমাজকর্ম পেশা সংশ্লিষ্ট কাজসমূহ বিভিন্ন অনুষদ বিভাগ থেকে শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ করে থাকেন। সমাজকর্ম পদ্ধতির জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে সাক্ষাৎকার গ্রহণে যথেষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবার সমাজ সম্পর্কে শিক্ষা পদ্ধতির দুর্বলতার কারণে সমাজকর্মে শিক্ষিত ব্যক্তির পেশাদার জ্ঞানের পরিপক্কতার অভাব থাকে। এর ফলে এদিক থেকেও সাক্ষাৎকার গ্রহণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
৩. উপযুক্ত পরিবেশের অভাব : উপযুক্ত পরিবেশ উত্তম সাক্ষাৎকারের পূর্বশর্ত। এ পরিবেশ যেমন বস্তুগত, তেমনি
আবার মানসিক। বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণে এ দুটি পরিবেশ ক্ষেত্রবিশেষ পাওয়া যায় না। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব উত্তরদাতা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না এবং সাক্ষাৎকার দারুণভাবে ব্যবহৃত হয়। পেশাদার সমাজকর্মের সুযোগ কম থাকায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যেমন এদেশে ভালো পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ পান, তেমনি আবার অন্যের অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেও এ সাক্ষাৎকার দারুণভাবে ব্যাহত হয়।
৪. উত্তরদাতার অজ্ঞতা ও অশিক্ষা : উত্তরদাতার উত্তরদানের যোগ্যতার উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে উত্তরদাতা সাক্ষাৎকারের লক্ষ্য বা গুরুত্ব বুঝতে পারে না এবং হালকাভাবে গ্রহণ করে। ফলে সাক্ষাৎকারের উন্মোচিত তথ্য বা ঘটনা তেমন ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে না। সমাজকর্মী যত দক্ষ ও অভিজ্ঞই হোক না কেন উত্তরদাতার ন্যূনতম জ্ঞান ও শিক্ষার অভাব সমাযোজন প্রতিষ্ঠার কাজকে ব্যর্থ করে দেয়।
৫. দারিদ্র্য : বাংলাদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণ ক্ষেত্রে দারিদ্র্য একটি প্রধান অন্তরায়। যেখানে বজ্রগত সাহায্যের ব্যাপার রয়েছে সেখানে দেখা যায় উত্তরদাতা তার প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা লুকায় কিংবা তার অবস্থা যতটা খারাপ তার চেয়ে আরো খারাপভাবে উপস্থাপন করে। ফলে প্রকৃত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না।
৬. সাংস্কৃতিক উপাদানের অভাব : এদেশের প্রচলিত সংস্কৃতিও সাক্ষাৎকার গ্রহণের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।এদেশের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদির প্রভাব ব্যক্তিমানুষের আচরণকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে যথাযথ সাক্ষাৎকার গ্রহণ বাধার মুখে পড়ে।
৭. রাজনৈতিক আচরণ : বাংলাদেশের
রাজনীতি অঙ্গনে সুস্থ রাজনীতি চর্চার বড় অভাব। তাই এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক কর্মী যদি উত্তরদাতা হয় কিংবা কোন সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক কারণ বিশ্লেষণের দরকার হয় উত্তরদাতা নিরাপত্তার অভাবে কিংবা বলা যায় নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতির কারণে অনেক তথ্য গোপন করে এবং এটাই স্বাভাবিক। ফলে রাজনৈতিক সহনশীলতার অভাব, এটিরও একটি পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব এদেশে সাক্ষাৎকার গ্রহণের বেলায় রয়েছে।
৮. প্রশাসনিক জটিলতা : উত্তরদাতা যদি আসামি বা কয়েদি হয়, তা সে প্রকৃত দোষী হোক বা না হোক তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ এদেশে প্রকৃত অর্থেই দারুণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অন্যদিকে উত্তরদাতা যদি সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তা হন, সেক্ষেত্রে সে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে বা ভয়ে যথার্থ তথ্য প্রকাশ করে না। ফলে এদিক থেকেও সাক্ষাৎকার দারুণভাবে সীমাবদ্ধ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সাহায্যার্থের মনোসামাজিক তথ্য আহরণ করে তার সমস্যা যথাযথভাবে সমাধানের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকার গ্রহণ প্রক্রিয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য সাহায্যার্থী ও সমাজকর্মী উভয়েরই প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। অনেকক্ষেত্রে প্রস্তুতির অভাবে সাক্ষাৎকার গ্রহণ লক্ষ্যানুযায়ী হয় না। তাছাড়া অনেক আর্থসামাজিক সমস্যার কারণে সফল সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তবে বর্তমানে সমাজকর্ম পেশা ধীরে ধীরে
বিকাশ লাভ করছে। পাশাপাশি মানুষের শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে এবং সমাজকর্ম পেশার প্রচার প্রসার যথার্থ অর্থে বৃদ্ধি পেলে এ সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া সমাজকর্ম পেশার বিকাশকে আরো গতিশীল করবে।