অথবা, বাংলাদেশে প্রচলিত সংশোধনমূলক কার্যক্রমগুলো তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমগুলোর ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমগুলো আলোচনা কর ।
উত্তর।৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে অপরাধীদের সংশোধনের ব্যবস্থা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে পরিচালিত হয়।১৯৪৯ সালে ঢাকার অদূরে মুড়াপাড়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বোরস্টাল স্কুল স্থাপনের মধ্যদিয়ে এদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে আরো বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রম : নিম্নে বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরা হলো :
১. প্রবেশন : অপরাধ সংশোধনের একটি আধুনিক পদ্ধতি হচ্ছে প্রবেশন। এটি অপরাধীদের বিচারকার্য স্থগিত রেখে চরিত্র সংশোধন প্রক্রিয়াকে বুঝায়। বাংলাদেশে ১৯৬০ সালের প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অর্ডিন্যান্স এ্যাক্ট এর ভিত্তিতে ১৯৬২ সালে প্রবেশন কার্যক্রম চালু হয়।বাংলাদেশে প্রবেশন প্রক্রিয়া অপরাধী, প্রবেশন কর্মকর্তা ও বিচারকের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রবেশন কর্মকর্তার তদন্তের ভিত্তিতে বিচারক অপরাধীর শাস্তি স্থগিত রেখে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দিয়ে থাকে। এ প্রক্রিয়ায় সমাজকর্মের ব্যক্তি সমাজকর্ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রবেশন কর্মকর্তা অপরাধী শর্তসমূহ যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি অপরাধীর উপর কেস রেকর্ডও সংরক্ষণ করেন। প্রয়োজনে ফলো-আপ পদ্ধতি অনুসরণ করেন।
২. প্যারোল : অপরাধী এক-তৃতীয়াংশ শাস্তি ভোগ করার পর শাস্তি স্থগিত রেখে আদালত থেকে শর্তাধীনে মুক্তি দেয়া হলে তাকে প্যারোল বলে। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি তবে এদেশে আদালত কর্তৃক মাঝে মাঝে অপরাধীর আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুতে সাময়িক সময়ের জন্য অপরাধীকে প্যারোল ব্যবস্থায় মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করেন।
৩. মুক্ত কয়েদিদের সেবা কার্যক্রম : মুক্ত কয়েদিদের সেবা কার্যক্রম প্রাপ্তবয়স্ক মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য প্রবর্তন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো মুক্ত কয়েদিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করা। কেননা দণ্ড ভোগকারীর সকল ধরনের সুযোগ সুবিধার পথ বন্ধ থাকে। সমাজের চোখে থাকে সে ঘৃণার ব্যক্তি। এ অবস্থায় ব্যক্তির ২য়বার অপরাধ করার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য এ ব্যবস্থা চালু করা হয়। বর্তমান বাংলাদেশে ২৩টি কেন্দ্রে প্রবেশনের সাথে সংযুক্ত করে প্রবেশন অফিসার বা আফটার কেয়ার সার্ভিস অফিসারের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম চলছে। তাছাড়া গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমেও সহায়তা করছে। মুক্তি প্রাপ্ত কয়েদিকে উৎপাদনশীল ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আফটার কেয়ার সার্বিস ব্যবস্থা একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
৪. জাতীয় কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান : এর আওতায় যে সমস্ত সেবা পরিচালিত হয় সেগুলো হলো :
ক. কিশোর আদালত,
খ. কিশোর হেফাজত,
গ. সংশোধনী প্রতিষ্ঠান।
১৯৭৪ সালে প্রণীত শিশু আইনের আওতায় জাতীয় কিশোর কিশোরী সংশোধনী কেন্দ্র অপরাধপ্রবণ কিশোরদের চরিত্র সংশোধন এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
১. নিরাপদ আবাসন : দেশের মহিলা ও শিশু-কিশোরীদের হেফাজতিদের জেলখানার পরিবেশ থেকে মুক্ত করে সুন্দর পরিবেশে থাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ২০০২ সাল থেকে এ প্রকল্প চালু হয়। মহিলা, শিশু, কিশোরীদের শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখা এর মূল উদ্দেশ্য। পেশাদারী সমাজকর্মীগণ হেফাজতীদের আদালতে আনা নেয়ার বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় সম্পাদন করেন।
২. বোরস্টাল স্কুল : বোরস্টাল স্কুল বাংলাদেশে প্রবর্তিত প্রথম সংশোধনী প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৯ সালে না
রায়ণগঞ্জ এবং পরবর্তীতে ময়মনসিংহের ধলায় কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের জন্য দুটি বোরস্টাল স্কুল স্থাপন করা হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশে সংশোধনী ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হচ্ছে। অপরাধী ও কিশোর অপরাধীদের চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা হ্রাস করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।