প্রশ্নঃ বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি এখনো কোন মারাত্মক পর্যায়ের দিকে ধাবিত হয় নি । সাধারণত কোন মুদ্রাস্ফীতির হার দুই অঙ্কের হলে কিছুটা উদ্বেগের কারণ হয় । বাংলাদেশের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি শতাংশের উপরে । বাংলাদেশে যে ধরনের মুদ্রাস্ফীতি পরিলক্ষিত হয় তা ব্যয় ধাক্কা মূল্যস্ফীতি ও চাহিদা টান মুদ্রাস্ফীতি বলে পরিচিত । সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা উচিত । তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যে ধরনের মুদ্রাস্ফীতি আছে তা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উদ্বেগের কারণ নয় ।
বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃতি : কোন কারণে সমাজে আয় বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বৃদ্ধি পায় । ফলে দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় । এভাবে মোট চাহিদা মোট যোগানের অতিরিক্ত হয়ে গেলে দামস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে । পক্ষান্তরে , উৎপাদনের উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে দাম স্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলে ।
জাতীয় পর্যায়ের ভোক্তার মূল্যসূচক ও মুদ্রাস্ফীতি : বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির হার ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । নিম্নে সারণির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতির প্রকৃতির হার দেখানো হলো :
২০০৭-০৮ = ৯.৯৩ মুদ্রাস্ফীতির হার
২০০৮-০৯ = ৬.৬৬ মুদ্রাস্ফীতির হার
২০০৯-১০ = ৭.৩১ মুদ্রাস্ফীতির হার
২০১০-১১ = ৮.২৭ মুদ্রাস্ফীতির হার
উৎস : অর্থনৈতিক সমীক্ষা – ২০১১-১২
উপরের সারণিতে দেখা যাচ্ছে যে , ২০১১-১২ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ সর্বাধিক । উক্ত সময়ে একদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ফলে জনগণের আয় ও চাহিদা বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে , বন্যার কারণে ফসলের উৎপাদন হ্রাস এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় । ২০১১-১২ অর্থবছরে মুদ্রাস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ২১.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । দেশে বিনিয়োগ , অর্থনৈতিক তৎপরতা ও খাদ্যশস্যের মূল্য হ্রাসের কারণে এমনটি ঘটেছে । বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতা হ্রাসের কালে সৃষ্ট এ ধরনের স্থবিরতা আদৌ বাঞ্ছনীয় নয় । বিনিয়োগ ও উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মূল্যস্তর বেড়ে যেতে পারে ।
বাংলাদেশে ব্যয় ধাক্কা মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি । চাহিদা টান মুদ্রাস্ফীতির মূল কারণ হলো টাকার অবমূল্যায়ন , ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধি , সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি । তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যে মুদ্রাস্ফীতি বিরাজমান রয়েছে তা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব মারাত্মক কিছু নয় । তবে মুদ্রাস্ফীতির হার যাতে ১০ – এ উন্নীত হতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত । কারণ মুদ্রাস্ফীতির শতকরা হার ১০ বা ততোধিক হলে অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে , বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি পরিমাণ ক্রমবর্ধমান । যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শুভ লক্ষণ নয় ।