প্লেটোর দার্শনিক রাজার সমালোচনাসমূহ আলোচনা কর ।

অথবা , প্লেটোর দার্শনিক রাজার সমালোচনার কারণসহ আলোচনা কর ।

অথবা , প্লেটোর দার্শনিক রাজার সমালোচনাগুলো পর্যালোচনা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : ” Father of political philosophy ” বলে স্বীকৃত প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং তাঁর “ দার্শনিক রাজার ” তত্ত্ব দর্শনের জগতে অভিনব ও আকর্ষণীয় হলেও তা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় । যুগে যুগে মানুষ যেমন তার দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে তেমনি তার দর্শন নানাভাবে সমালোচিতও হয়েছে । আধুনিক কালের দার্শনিকগণ তাঁর শাশ্বত শাসন মই এ গত্য ছোটো উপলব্ধি করেন ডি এবং কাজলও যে গুৰু বাষ্ট্রের সেবামাস এই রাষ্ট্রের সকল কয়স্তাই উৎস তা প্লেটোর সমকালে এবং তার পূর্বভাগের রাষ্ট্রচিন্তার ছিল অনুপস্থিত । তাই ঠিক ঐতিহ্য নির্ভর শাসনব্যবস্থা আধুনিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ।

সমালোচনা: প্রোটোর সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেকেই অনেকভাবে প্লেটোর আর্শনিক বাজার নীতির সহাগোনা করেছেন । প্রোটোর সমকালীন সোভিস্টগৎ , বিশেষ করে সোফিস্টদের শিক্ষাগুরু আইসোক্রেটিস প্লেটোর কে অস্ত ও কল্পনাবিলাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন । নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো ।

১. টায় শিক্ষাব্যবস্থা সার্বজনীন নয় : যদিও প্লেটো স্বীকার করেছেন যেসব পিতা – মাতার স্বভাবে যৌগা ও ভায়ের উপাদান রয়েছে , তাদের মধ্য থেকে স্বর্ণের উপাদান সমন্বিত সন্তানের জন্য হতে পারে । কিন্তু তাঁর The Republic আলোচনায় ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেননি । তাঁরা এ ধরনের সন্তানদের তাদের মূল অংশ থেকে আলাদা করে সাসলের পর্যায়ে উন্নীত করার বিধান সংবলিত কোন পরিকল্পনা তিনি সেন নি । তিনি যে শিক্ষাব্যবস্থার কথা বে বধূ উচ্চতর শ্রেণীর শিশুদের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন । কৃষক , শ্রমিক সন্তানদের শিক্ষা সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেন নি । তিনি মূলত বিশ্বাস করতেন যে , উচ্চতর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মহত্তর চরিত্র গঠনে অভিভাবকনের একচেটিয়া ।

২. স্বৈরাচারী শাসনের নামান্তর : প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসনের উপর ভিত্তি করে বর্তমান শতাব্দীতে সাবানের বিষ্ঠা ঘটেছে । তাই অনেকে প্লেটোর দার্শনিক বাজার শাসনকে স্বৈরাচারী শাসনের নামান্তর বলে আখ্যায়িত করেছেন । পারেন । ফলে জনস্বার্থের নামে স্বেচ্ছাচার চালালে তাতে কারও আপত্তি করার অবকাশ থাকবে না এবং তাতে নিজ স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হতে পারে ইতিহাস প্রমাণ করে যে , প্রকৃত দার্শনিক বাজার আবির্ভাব কোথাও হয় নি ।

৩. শাসিতের প্রতি চ্যালেঞ্জ : প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসননীতি “ শাসিতের সমভিত্তিক শাসনব্যবস্থার প্রতি একটা আপেভম্বরূপ । ” ফরাসি বিপ্লবের অধিনায়ক রোবেসপিয়ার যেমন জ্যাকোবীনদের হ্রাসের শাসনতে স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে স্বাতন্ত্রের স্বেচ্ছাচান বলে অভিহিত করতেন এবং মানুষকে স্বাধীন হতে বাধ্য করার জন্য সে স্বেচ্ছাচারকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে দাবি করতেন । প্লেটোর দার্শনিক বাজার শাসনও ছিল অনেকটা সে ধরনের ব্যাপার । এছাড়া প্লেটোর নার্শনিক রাজার শাসনীতিতে সাধারণ মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের যোগ্যতাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে । ফলে গণতন্ত্রের যে আন্দোলন পরবর্তী কালে গণমানুকে অনুপ্রাণিত করে তা প্লেটোর এ তত্ত্বে অস্বীকৃত হয়েছে ।

৪. গণতন্ত্র বিরোধী : প্লেটোর দার্শনিক রাজা শাসিত শাসনব্যবস্থা গণতান্ত্রিক নয় কারণ তিনি গণতন্ত্রকে নিকৃষ্ট শাসদবাহস্থ বলে মনে করেন । বর্তমানে গণতন্ত্র একটি উত্তম শাসনব্যবস্থা । এজন্য দার্শনিক রাজার শাসিত শাসনব্যবস্থা কখনো সবগুণের অধিকারী হতে পারে না । এজন্যই নির্দোষ ও নিম্পাস ব্যক্তির শাসন অতিত করার সম্পূর্ণ অবান্তর এবং কাল্পনিক । অাদিহিমূলক নয় ।

৫. প্লেটোর দার্শনিক রাজার শাসন দায়িত্বশীল ও জংবদিহিমূলক নয় । সার্শনিক বাজাবা রানের ইচ্ছামতো শাসন পরিচালনা করবেন । এজন্য কারও কাছে তার কাজের জন্য জবাসনিহি করতে হবে না । শাসনব্যবস্থার জনগণের মতামতের জন্য দেখা হয় এবং অধিকার রক্ষা করা হয় । কিন্তু দার্শনিক রাজার শাসনে খেছের জনগণের মতামত উপেক্ষিত যেহেতু এখানে জনগণের অধিকারণ রক্ষিত হয় না ।

৬. আইনের শাসন অনুপস্থিত আদর্শ রাষ্ট্রে আইনের শাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুতন করে নি । তিনি আনের হিসেবে অভিহিত করেন । কিন্তু আইনের শাসন কখনো একজনের কথা মত চলতে পারেনা। প্লেটোর সাম্যবাদ ব্যক্তিগত সম্পত্তিসহ পরিবার প্রথারও বিলুপ্তি ঘটে । তা শুধু শাসক এবং যোদ্ধা শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । কিন্তু সেক্ষেত্রে সমাজে বৈষম্য দূর করে না । কারণ তাঁর তত্ত্বে শ্রমিক শ্রেণী বা উৎপাদক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয় ।

৭ . প্লেটোর সাম্যবাদে তিনটি শ্রেণী বিদ্যমান । যেমন শাসক শ্রেণী ; যোদ্ধা শ্রেণী এবং শ্রমিক বা উৎপাদক শ্রেণী । যা মূলত তার কল্পিত রাষ্ট্র তত্ত্ব নির্ভর ।

৮ . প্লেটোর সাম্যবাদ আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস করে না । কারণ আন্তর্জাতিকতাবাদ প্লেটোর রাষ্ট্রতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয় নয় । তাঁর কল্পিত রাষ্ট্রতত্ত্বে তিনি শুধু রাষ্ট্রকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে চিন্তা করেছেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , প্লেটোই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য সাম্যবাদের ধারণা দেন । এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলা যায় যে , প্লেটোর সাম্যবাদী তত্ত্বে এর একটা অভিনবত্ব হলো নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে । কিন্তু তার পরও আমরা পূর্ণাঙ্গ সাম্যবাদ বলতে পারি না । তবে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্লেটোর সাম্যবাদী ধারণা আধুনিক সাম্যবাদীদের চিন্তা ও লেখনীতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে । মূলত এখানেই প্লেটোর সাম্যবাদী তত্ত্ব বা ধারণার যথার্থতা নিহিত ।

প্রশ্ন। প্লেটোর সাম্যবাদের সমালোচনা সম্পর্কে আলোচনা কর । অথবা , প্লেটোর সাম্যপদ সমালোচনার সাথে পর্যালোচনা কর ।

অথবা , প্লেটোর সাম্রবাদ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয় যুক্তি সহকারে ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : মহান গ্রিক দার্শনিক প্লেটোব অমর গ্রন্থ ‘ The Republic এ বর্ণিত আদর্শ রাষ্ট্রের বাস্তবায়নকল্পে তিনি দুটি উপায়ের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন । এদের একটি হলো শিক্ষাব্যবস্থা এবং অন্যটি হলো সাম্যবাদ তত্ত্ব । একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের জন্য যদিও প্লেটো শিক্ষাব্যবস্থার উপর খুব জোর দিয়েছেন , তথাপি তিনি সাম্যবাদকে উপেক্ষা করতে পারেন নি । প্লেটোর সাম্যবাদ তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের এক অনবদ্য সৃষ্টি ।

প্লেটোর সাম্যবাদের সমালোচনা : প্লেটো তাঁর আদর্শ রাষ্ট্রের সাম্য , ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে · সাম্যবাদ ব্যবস্থার কথা বলেছেন তা মানুষের কতকগুলো ব্যক্তিগত অধিকারকে খর্ব করে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে । নিম্নে সমালোচনাসমূহ আলোচনা করা হলো :

১. প্লেটোর সাম্যবাদকে Half Communism বলা যায় । কারণ প্লেটো শুধু শাসক শ্রেণী ও যোদ্ধা শ্রেণীর জন্য পরিবার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি উচ্ছেদের কথা বলেছেন । প্লেটোর সাম্যপদ তত্ত্বে শ্রমিক বা উৎপাদক শ্রেণী অন্ত র্ভুক্ত নয় । রাষ্ট্রের কোন একটি শ্রেণীকে বাদ দিয়ে সাম্যবাদের সুফল বা সাম্যবাদের পূর্ণাঙ্গ উপযোগিতা জনগণ ভোগ করতে পারে না ।

২. প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বে শাসক শ্রেণীকে সর্বোচ্চ সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে । তাঁর , সাম্যবাদ তত্ত্বে শাসক শ্রেণী কারো কাছে কোন প্রকার দায়বদ্ধ নয় । এ রকম কর্তৃত্ববাদী শাসক শ্রেণী যদি কোন অন্যায় , অপরাধ করে এমন কী তাঁরা যদি রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজে উদাসীন থাকে তবে সে ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো কোন সুযোগ নেই ।

৩ . প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বে রাজনীতির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । কিন্তু বাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ গঠনমূলক সামাজিক অবকাঠামোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে এমন কোন গুরুত্ব নেই

৪ . প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্বে রাষ্ট্রের ঐক্য ও সহতি কামনা করা হয়েছে । কিন্তু , তার সাম্যবাদ তত্ত্বে শ্রেণী প্রথার উচ্ছেদসহ শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের কোন সুযোগ নেই । ফলে সমাজের শ্রমিক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কোন কল্যাণ সাধিত হয় না ।

৫ . প্লেটোর সাম্যবাদ তত্ত্ব সংঘাতের উপর প্রতিষ্ঠিত নয় । তাঁর সাম্যবাদ রাষ্ট্রতত্ত্ব ভিত্তিক পদ্ধতির উপর প্রতিষ্ঠিত । এক্ষেত্রে শ্রেণী সংগ্রামের কোন সুযোগ নেই । প্লেটোর সাম্যবাদ মূলত তাঁর কল্পিত রাষ্ট্রতত্ত্ব নির্ভর ।

৬. প্লেটোর সাম্যবাদ ব্যক্তিগত সম্পত্তিসহ পরিবার প্রথারও বিলুপ্তি ঘটে । তা শুধু শাসক এবং যোদ্ধা শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ! কিন্তু সেক্ষেত্রে সমাজে বৈষম্য দূর করে না । কারণ তাঁর তত্ত্বে শ্রমিক শ্রেণী বা উৎপাদক শ্রেণীর ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য নয় ।

৭ . প্লেটোর সাম্যবাদে তিনটি শ্রেণী বিদ্যমান । যেমন শাসক শ্ৰেণী ; যোদ্ধা শ্রেণী এবং শ্রমিক বা উৎপাদক শ্রেণী । যা মূলত তার কল্পিত রাষ্ট্র তত্ত্ব নির্ভর ।

৮ . প্লেটোর সাম্যবাদ আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস করে না । কারণ আন্তর্জাতিকতাবাদ প্লেটোর রাষ্ট্রতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয় নয় । তাঁর কল্পিত রাষ্ট্রতত্ত্বে তিনি শুধু রাষ্ট্রকে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে চিন্তা করেছেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে , প্লেটোই সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য সাম্যবাদের ধারণা দেন । এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলা যায় যে , প্লেটোর সাম্যবাদী তত্ত্বে এর একটা অভিনবত্ব হলো নারী এবং পুরুষের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে । কিন্তু তার পরও আমরা পূর্ণাঙ্গ সাম্যবাদ বলতে পারি না । তবে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে প্লেটোর সাম্যবাদী ধারণা আধুনিক সাম্যবাদীদের চিন্তা ও লেখনীতে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে । মূলত এখানেই প্লেটোর সাম্যবাদী তত্ত্ব বা ধারণার যথার্থতা নিহিত ।