অথবা, বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াগুলো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বাস্তবতা মূল্যায়ন কর।
অথবা,বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়াগুলো সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ক্ষমতায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের জীবনকে নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা আলোকে নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের গৃহীত পদক্ষেপ মূল্যায়নে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব। কারণ এ কর্মসূচিগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সমান্তরাল ও পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। নারীর অংশগ্রহণের যে বিশ্বস্বীকৃত তত্ত্ অর্জন করতে পারে। রাষ্ট্রের সহযোগিতায় বা রাষ্ট্র সমর্থিত আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিও এর কিছু প্রকল্পের কর্মসূচির বিষয়। দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকরূপে অবলোকনের দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে মূলধন করে মুনাফা অর্জনের প্রবণতা রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগও এখানে ঘটছে না। এ আচ্ছন্নতা বা ধারাবাহিকতার বিচ্ছিন্নতার মূলে ক্রিয়াশীল রয়েছে দুটি
নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের বাস্তবতা : রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সমান্তরাল ও পরিপূরক হিসেব কাজ করছে। এক্ষেত্রে নারী উন্নয়ন বা ক্ষমতায়নের জন্য গৃহীত এদের কর্মসূচি বর্ণিত হলো :
১. নারী কর্মসংস্থান : ১৯৮২ সালে কানাডিয়ান গমের সহায়তায় CARE বাংলাদেশের গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে Rural Maintenance Programme (RMP) বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হাত নেয়। রাস্তাঘাট উন্নয়নের পাশাপাশি এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে দুঃস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে
স্বাবলম্বী করে তোলা। এ লক্ষ্যের দুটি দিক রয়েছে। যথা :
ক. দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও
খ. অবকাঠামো নির্মাণ দ্বারা উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ।
২. প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ : কর্মকালের তৃতীয় বছরে এ সদস্যদেরকে আয় সৃষ্টিমূলক প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং জীবনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। চার বছ তারা বাধ্যতামূলক সঞ্চয় ফান্ড হতে প্রায় ১০ হাজার টাকা করে পায়। এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে এ টাকা তারা যেন আয সৃষ্টিমূলক খাতে বিনিয়োগ করে পরবর্তী জীবনে দারিদ্র্যসীমার ঊর্ধ্বে বসবাস করতে পারে।
৩. পানি উন্নয়ন বোর্ড : এ প্রকল্পটি হচ্ছে পল্লিউন্নয়ন বা Rural Development Board (RDB) এর একটি অনুপ্রকল্প, যা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বা WFO কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে এ প্রকল্পকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ মহিলা নিয়োগ । এখানে প্রশিক্ষণ বা বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের কর্মসূচি নেই।
৪. সমন্বিত পল্লিউন্নয়ন : এ প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে আয় সৃষ্টিমূলক খাতে বিনিয়োগের জন্য দুঃস্থ মহিলাদের মধ্যে ক্ষুদ্র রেশম পালন ও বাণিজ্যিকভাবে মুরগি পালনে সহায়তাদান, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়নসহ মৌলিক বিষয় সম্পর্ক ঋণ বিতরণ, তাদের মধ্যে টিউবওয়েল ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নামমাত্র মূল্যে বিতরণ, বনায়নে নারীদের সম্পৃক্তকরণ তাদেরকে অবহিত করে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দান, আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা ইত্যাদি।
৫. সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা : একজন মহিলা তার মৃত স্বামীর নামে জমি ক্রয় করেন। কারণ তার নাম জমি কেনা হলে উত্তরাধিকারসূত্রে মেয়েরা মায়ের সম্পত্তির বৃহৎ অংশটি পাবে। অথচ মেয়েরা হলো পরের ঘরের বধূ উপর্যুক্ত বক্তব্যটি পিতৃতন্ত্রের ভিতকে আরো দৃঢ়তর করে। এক্ষেত্রে পুরুষ ক
োনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি, করেছে নারী আবহমানকালের লালিত ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধ।
৬. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা : পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এমনকি অনেক মহিলা স্বামীর তীব্র আপত্তির মুখেও কন্যা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এখন কন্যার বিবাহ, জমি ক্রয়, ব্যবসায় মূলধন নিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মহিলারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়।
৭. প্রজনন ও জন্মশাসনের নিজস্ব মতামত বাস্তবায়ন : বৃহত্তর পরিমণ্ডলে পদচারণা এবং তথ্যের আদান- প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে জন্মশাসন সম্পর্কে মহিলাদের ইতিবাচক মনোভাব গড়ে উঠেছে। খুবই নগণ্যসংখ্যক নারী ছাড়া প্রত্যেকেই জন্মশাসনের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তবে লক্ষণীয় যে, এ নারীদের প্রত্যেকেই এ সরঞ্জাম ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত হলেও তারা একটির পরিবর্তে অন্যটির ব্যবহারের চক্রে আবদ্ধ থাকছে।
৮. আইনি আশ্রয় গ্রহণের ক্ষমতা : IIRD এর কর্ম প্রশিক্ষণের একটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু হচ্ছে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল ঢাকার আইন ও নারী উদ্যোগ কেন্দ্রে। অথচ এ প্রশিক্ষণের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। প্রকল্পে কর্মরত মহিলাদের মধ্যে কেবল নেত্রকোণার বাওয়ারী বিল এলাকার মহিলারা সংঘবদ্ধভাবে নারীনির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলেন, যা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চাপে আর অগ্রসর হতে পারেনি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারীর উন্নয়ন বা উন্নয়নে অংশগ্রহণের জন্য যে কর্মসূচিগুলো গৃহীত হচ্ছে তার অধিকাংশের ব্যবস্থাপনায় ও নীতি নির্ধারণে রয়েছেন পুরুষতন্ত্রের ধারক পুরুষরাই। সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ এর যে তত্ত্বগুলো রয়েছে একমাত্র দারিদ্র্য বিমোচন তত্ত্ব বাদে অন্য কোনো তত্ত্বই গৃহীত হয়নি। ফলে নারীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটেনি। নারী কেবল ক্ষুধানিবৃত্তির উপায় ছাড়া আর কোনো কাজেই দক্ষ হয়ে উঠছে না, ঘটছে না তার কোনো উত্তরণ বা উন্নয়ন। ফলে নারী
উন্নয়নের বিষয়টিকে এখন অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।