বাংলাদেশে ডায়াবেটিক সমিতির কার্যক্রমগুলো লেখ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের দীর্ঘ শাসন ও শোষণের বেড়া ছিন্ন করে স্বাধীন হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশের দারিদ্র্যতা চরম রূপ ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে অনেক NGO এ দেশের জনগণের কল্যাণার্থে
এগিয়ে আসে। ১৯৭৬ সালে প্রশিকা এক অনন্য NGO হিসেবে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। এটি দারিদ্র্য বিমোচন ও
অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ দেশের ভাগ্যাহতদের সার্বিক উন্নয়ন সাধনকল্পে প্রশিকা নানাবিধ
হতে কার্যক্রম গ্রহণ ও তা পরিচালনা। তাই বাংলাদেশে প্রশিকার গুরুত্ব ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।
→ বাংলাদেশে প্রশিকার কার্যক্রম ঃ বাংলাদেশে প্রশিকার কিছু কার্যক্রম নিম্নে আলোচিত হলো ঃ
১. সংগঠিতভাবে দারিদ্র্য বিমোচন ঃ দারিদ্র্য এ দেশের বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, দারিদ্র্য বিমোচন করা হচ্ছে প্রশিকার অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ২০-২৫ জন দরিদ্র সদস্য নিয়ে প্রশিকার প্রাথমিক দল গঠিত হয়। যা সাধারণত সমিতি নামে পরিচিত। আর এ সমিতির মাধ্যমে প্রশিকা গ্রাম, ইউনিয়ন পর্যায়ে ক্ষুদ্র ঋণদান ও শিক্ষা
কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
২. গবাদি পশুপালন কার্যক্রম ঃ গবাদি পশুপালন অত্যন্ত লাভজনক বলে গ্রামীণ মহিলারা এ কাজে অংশগ্রহণ করতে
আগ্রহী। প্রশিকা তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে, প্রশিক্ষণ ও টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। এ পর্যায়ক্রমে প্রশিকা ২০০১- ২০০২ সালে প্রায় ৩,৫৭৮ কোটি টাকা বিতরণ করে।
৩. সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি ঃ প্রশিকা এ দেশের সামাজিক বনায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ২০০২ সাল পর্যন্ত এটি প্রায় ৮ কোটি চারা রোপণ করেছে এবং ৮,৬৬৯ একর শালবন রক্ষা করেছে। ফলে পতিত জমি ও রাস্তাঘাটের পার্শ্ববর্তী জমির সদ্ব্যবহার সম্ভব হয়েছে।
৪. মৎস্যচাষ প্রকল্প ঃ মৎস্য চাষ ইদানীং একটি লাভজনক পেশা হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এ দেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে ৩,৯৪০টি মৎস্য চাষ প্রকল্পে মোট ২৪,৪৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে এবং প্রকল্পগুলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্যচাষের খুঁটিনাটি বিষয় জনসাধারণকে অবগত করার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
৫. মৌমাছি চাষ প্রকল্প ঃ মৌমাছি চাষের মাধ্যমে আয়ের পথ সুগম হতে পারে। ফলে কিছুটা হলেও বেকারত্বের হার কমবে। তবে মৌমাছি চাষ তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে প্রশিকা মূর্খ অর্ধশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের যাবতীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণবিতরণের ব্যবস্থা করছে।
৬. সার্বজনীন শিক্ষা কার্যক্রম : শিক্ষাই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। জাতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে প্রশিকা চার ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেগুলো হলো :
(ক) বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম ;
(খ) সাক্ষরতা শিক্ষা কার্যক্রম ;
(গ) অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ;
(ঘ) দরিদ্র ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম। এভাবেই প্রশিকা ২০০২ সালের মধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ফলে এ দেশে শিক্ষার হার বেড়েই চলেছে।
৭. রেশম চাষ কার্যক্রম ঃ রেশম চাষের মাধ্যমে স্বাবলম্বিতা অর্জন ও রেশম শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্যই ১৯৭৭ সালে প্রশিকা এ কার্যক্রম চালু করে।এতে সদস্যদের মাঝে তুঁত গাছ রোপণের জন্য ঋণ প্রদানের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়।
৮. গৃহায়ন কর্মসূচি ঃ বাসস্থান ছাড়া মানুষ ভালোভাবে বাঁচতে পারে না। বাসস্থানের দাবি মানুষের চিরন্তন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এ দেশের বহু মানুষ বাসস্থান নির্মাণের মত অর্থের মালিক নন তারা। এ ক্ষেত্রে প্রশিকা বাসস্থান নির্মাণের ঋণ বিতরণের সাথে পরিবেশবান্ধব ও টেকসহ বাসস্থানের জন্য নানা প্রশিক্ষণের ও ব্যবস্থা করে থাকে ।
৯. বস্তিবাসীদের উন্নয়ন কার্যক্রম ঃ বড় বড় শহরগুলোতে লাখ লাখ বস্তিবাসী বাস করে। তাদের ভাগ্যোন্নয়নে এ কার্যক্রম প্রশিকা নিম্নোক্তভাবে বাস্তবায়ন করে থাকে।
(ক) ক্ষুদ্রঋণ প্রদান (খ) সঞ্চয় প্রকল্প (গ) আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি (ঘ) শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি কার্যক্রম (ঙ) আইনি সহায়তা ইত্যাদি ।
১০. মানব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঃ মানব উন্নয়ন বলতে মানবের মাঝে শিক্ষা দীক্ষার চর্চা করানোর সুযোগ দানের মাধ্যমে দেরকে দক্ষ জনশক্তিরূপে গড়ে তোলা। আর মানব উন্নয়ন হলেই এক দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অগ্রগামী হতে বাধ্য । প্রশিকা সেই লক্ষ্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
(ক) স্বাস্থ্য ও পুষ্টি
(খ) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা
(গ) দল গঠন
(ঘ) উন্নয়ন ও সংগঠন
(ঙ) অংশগ্রহণমূলক কৌশল ও
(চ) স্বাস্থ্যব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ।
প্রশিকা তার সৃষ্টিলগ্ন থেকে দেশের অগণিত বেকার যুবক -যুবতীদের মানব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দান করে আসছে।
১১. স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি ঃ স্বাস্থ্যই সম্পদ। স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায়, কখন কি খাদ্য গ্রহণ হবে প্রভৃতি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত করে প্রশিকা ।
১২. স্বাস্থ্যগত অবকাঠামোর বিকাশ ঃ বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র হওয়াতে স্বাস্থ্যগত সেবা সহজে গ্রহণ সক্ষম নয়। তাদেরকে স্বাস্থ্যসেবা সহজেই দিতে প্রশিকা স্বাস্থ্যগত অবকাঠামোর বিকাশ করে থাকে। এটি আর্সেনিকমুক্ত পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহারে ৬২৩৪টি ফিল্টার ও ১৪১১৮৪টি স্যানিটারি স্থাপন করেছে।
১৩. সমন্বিত বহুমুখী নারী উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই অশিক্ষিত এবং কোনো রকম অর্থনৈতিক না। প্রশিকা
কর্মকাণ্ডে লিপ্ত নয়। ফলে তারা পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলতেও পারে না। উৎপাদনকার্যে ভূমিকা রাখে ন প্রায় ৫ লক্ষ নারী দল গঠন করে সমন্বিত বহুমুখী নারী উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
১৪. পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা ঃ পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রশিকা বেশ জোরালো ভূমিকা রাখে।
জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার প্রয়োগে প্রশিকা নানা প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। ফলশ্রুতিতে ২০০১-২০০২ সালে এটি প্রায় ১০,৮৯৮ একর জমিতে পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালু করতে সক্ষম হয়েছে।
১৫. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ঃ বাংলাদেশে দুর্যোগ প্রতিবছর হানা দেয়। ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় এ দেশের আশা- প্রেরণা। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রশিকা দুর্যোগ আক্রান্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চলছে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রশিকা বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি NGO । এটি এ দেশের আর্থ- সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে সর্বদাই সচেষ্ট। সামান্য কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও সার্বিক উন্নয়নে প্রশিকার ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য ।