বাংলাদেশে কি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলো বিদ্যমান?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলো বাংলাদেশে বিদ্যমান আছে কি?

উত্তর : পৃথিবীর কোন দেশই বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সবকটি পূর্বশর্ত দ্বারা সমৃদ্ধ নয়। উন্নত দেশগুলোতে উন্নয়নের সবকটি পূর্বশর্ত বিদ্যমান থাকে। উন্নয়নের পূর্বশর্তগুলো বাংলাদেশে কতটুকু বিদ্যমান তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. প্রাকৃতিক সম্পদঃ বাংলাদেশে কি পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে তার হিসাব নিকাশ এখনও হয়নি। বাংলাদেশে তৈল প্রাপ্তির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন তৈল ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। তবে বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস পাওয়া গেছে। তাছাড়া অন্যান্য কিছু খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। আমাদের জমিও খুব উর্বর। সুতরাং উর্বর জমি, প্রাপ্ত গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের সাহায্যে পরিকল্পিত উপায়ে এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যায়।

২. মানব সম্পদ : জনসম্পদে আমাদ্রে প্রাচুর্য আছে। তবে শিক্ষা ও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে আমাদের জনসংখ্যা এখনও জনশক্তিতে পরিণত হতে পারেনি। তবে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই বিপুল জনসম্পদকে সম্পদে । পরিণত করতে পারি এবং এদের কাজে লাগিয়ে এদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।

৩. মূলধন গঠন: ব্যাপক দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় কম। এদেশে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের হাস জাতীয় আয়ের মাত্র ১৮ শতাংশ। আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয়ও কম। ফলে মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি পায় না।

৪. অর্থনৈতিক অবকাঠামোঃ আমাদের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নত নয়। রাস্তাঘাট, রেলপথ, বিদ্যুৎ উৎপাসম ব্যবস্থা এখনও প্রয়োজনের তুলুনায় কম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়নে সরকারকে আরও যত্নবান হতে হবে।

৫. দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি: দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি উন্নয়নের অপরিহার্য শর্ত। কিন্তু এখনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনীয় দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে উঠেনি। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে একদল সফল ও দক্ষ উদ্যোক্তার উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন বোধে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলা যেতে পারে।

৬. বৃহদায়তন উৎপাদন: আমাদের দেশে বেসরকারি খাতে এখনও বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে দেশে বেসরকারি খাতে বৃহদায়তন উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

৭. প্রযুক্তি ও কারিগরি কর্মকৌশলঃ প্রযুক্তি বিদ্যায় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। কৃষিতে এখনও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হয় না। অবশ্য যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি করে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে উৎপাদনের সকল ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন বোধে বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করা যেতে পারে।

৮. অর্থনৈতিক কাঠামো: আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে এখন ও কৃষির প্রাধান্য রয়েছে। আমাদের জাতীয় আয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এখনও কৃষি খাত থেকে পাওয়া যায়। শিল্পখাতের অবদান এখন ও খবুই সামান্য। উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদের শিল্প খাতের অবদান ক্রমশ বাড়াতে হবে।

৯. বিস্তৃত বাজারঃ বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র দেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজার খুবই ছোট। এটি বৃহদায়তন শিষ্টের প্রসারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশ তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।

১০. শিক্ষা:বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার খুবই কম। তাছাড়া শিক্ষার মান নিম্ন ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

১১. জনগণের দৃষ্টি ভঙ্গি: অশিক্ষা ও মোলা-পুরোহিতদের ভুল ব্যাখ্যার ফলে এদেশের জনগণের মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের অনুকূলে ছিল না। শিক্ষা প্রসারের ফলে বর্তমানে এ সমস্যা দূর হয়েছে। সুযোগ পেলে এদেশের মানুষ বর্তমানে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে আগ্রহী।

১২. সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথাঃ এদেশের অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত। তাদের উপর সঙ্গত কারণেই মোলা ও পুরোহিতদের প্রভাব অনেক বেশি। ইসলামে যদিও ইহকাল ও পরকালকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তবু অশিক্ষা ও মোন- 1-পুরোহিতদের ভুল ব্যাখ্যা এদেশের মানুষকে দীর্ঘদিন কুসংস্কারাচ্ছন্ন করে রেখে ছিল। তবে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে এই সমস্যা বর্তমানে দূর হয়েছে।

১৩. পর্দা প্রথা: বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে পর্দা প্রথা প্রচলিত আছে এবং দেশের অধিকাংশ মহিলাই এই পর্দা প্রথা মেনে চলে। পর্দা প্রথার কারণে আমাদের অনেক মহিলা ঘরের বাইরে গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে। এটি উন্নয়নের পরিপন্থী। তবে শিক্ষার অগ্রগতির সাথে সাথে পর্দা প্রথার কঠোরতা আস্তে আস্তে হ্রাস পাচ্ছে।

১৪. রাজনৈতিক অবস্থা: স্বাধীনতা উত্তরকাল দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব ছিল। স্বাধীনতার পরও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব রয়েছে। সরকারের ঘনঘন পরিবর্তনের কারণে অর্থনৈতিক উন্নতি আশানুরূপ হয়নি।তাছাড়া হরতাল, বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে বর্তমানে উন্নয়নের সকল পূর্বশর্ত সর্বাংশে বলবৎ নেই। তবে বিগত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় খানিকটা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সুতরাং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশ গড়ার কাজে সচেষ্ট হলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।