অথবা, বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের মানসিক ও অর্থনৈতিক কারণসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের কিশোর অপরাধের মানসিক ও অর্থনৈতিক কারণসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে কিশোর অপরাধ একটি জটিল সামাজিক সমস্যারূপে দেখা দিয়েছে। এ সম্পর্কে সমাজের চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন। কিশোর অপরাধের কারণ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, জীববিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদগণ স্ব-স্ব দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তবে কিশোর বা বয়স্ক
কোনো অপরাধের জন্যই একটি নির্দিষ্ট কারণ এককভাবে দায়ী নয়। এর জন্য দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল কারণই দায়ী।
মানসিক কারণ : শিশু কিশোররা আবেগপ্রবণ হয়। তাই কড়া শাসন, ঘৃণা, নৈরাজ্য, প্রতিশোধ স্পৃহা, অত্যধিক নির্ভরশীলতা, নিরাপত্তাবোধের অভাব তাদের মনে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং তারা অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠে।
অর্থনৈতিক কারণ : বাংলাদেশে কিশোর অপরাধের অর্থনৈতিক কারণসমূহ নিম্নরূপ :
১. দারিদ্র্য : দারিদ্র্য কিশোর অপরাধের একটি প্রধান কারণ। দারিদ্র্যের জন্য অনেক অভিভাবকের পক্ষেই শিশু- কিশোরদের সব চাহিদা মিটানো সম্ভব হয় না। তাদের চাহিদা মিটানোর জন্য কিশোররা পকেট কাটা, চুরি প্রভৃতি অপরাধে লিপ্ত হয়। অনেক সময় পরিবারের দারিদ্র্যতা লাঘবের উদ্দেশ্যেও অনুরূপ কাজ করে থাকে। সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এর জরিপে দেখা যায় এদেশে ৬৯ শতাংশ কিশোর অপরাধী দারিদ্র্যের কারণে অপরাধী হয়।
২. অপরিমিত অর্থ : তরুণরা স্বভাবতই অপরিণামদর্শী। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকাকড়ি হাতে পেলে তারা বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়।
৩. আর্থসামাজিক বৈষম্য : বাংলাদেশে প্রকট আর্থসামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান। এ বৈষম্য বিক্ষোভ ও প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। কোনো কিশোর যখন দেখে যেখানে তাদের দুবেলা অন্নের ব্যবস্থাও হয় না সেখানে তারই বয়সী আরেকজন রাজকীয় আরাম আয়েশে লালিতপালিত হচ্ছে তখন তার মনে যে প্রতিক্রিয়া হয় তা তাকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কিশোর অপরাধ একটি ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি ও সমস্যা। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে এর ব্যাপকতা, প্রচণ্ডতা ও বৈচিত্র্য অনেকগুণে বেড়ে গিয়েছে এবং ক্রমে ক্রমে বাড়ছে।