বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎসমূহ উলেখ কর।

অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির আনুষ্ঠানিক উৎসসমূহ কী কী?
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎস লিখ ।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির আনুষ্ঠানিক উৎসগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির আনুষ্ঠানিক উৎস সম্পর্কে লিখ।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
কোনো একটি সুনির্দিষ্ট স্থান বা এলাকার জনগণের স্থানীয় সমস্যা ও অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা, স্থানীয় ব্যাপারে সম্পৃক্ত হওয়া, লক্ষ্য স্থির করা, পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এবং সর্বোপরি স্থানীয় চাহিদা মোতাবেক বিষয়বস্তু নির্ধারণ সাপেক্ষে যে রাজনীতি গড়ে ওঠে তাকেই স্থানীয় রাজনীতি বলে অভিহিত করা হয়।
বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎসমূহ : বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে যে সকল প্রাতিষ্ঠানিক উৎস রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. ইউনিয়ন পরিষদ : স্থানীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ । বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ে এক একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়। গ্রামীণ পর্যায়ের দায়িত্বশীল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের বাংলাদেশ স্থানীয় শাসন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত প্রতি ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হবে। ইউনিয়ন পরিষদের জনগণের প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান, নয়জন সদস্য এবং ৩ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ গণতন্ত্রকে স্থানীয় এলাকার দোরগোড়ায় পৌছে দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভূমিকা পালন করে। তাই ইউনিয়ন পরিষদকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা চলে।
২. উপজেলা পরিষদ : বাংলাদেশের স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের মধ্যে একটি প্রধান উৎস হচ্ছে উপজেলা পরিষদ। বাংলাদেশে উপজেলা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয় ১৯৮২ সালে। এর পরবর্তী সময়ে কোনো সরকারের আমলে উপজেলা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলেও বর্তমানে উপজেলাসমূহে নির্বাচিত চেয়ারম্যান দায়িত্বে রয়েছেন।
৩. পৌরসভা : পৌরসভা শহর এলাকায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থাপিত শহর এলাকার সমস্যা স্থানীয় ভিত্তিতে সমাধানপূর্বক শহর জীবনের শ্রীবৃদ্ধি সাধন, গণ-সহায়তা বৃদ্ধি এবং শহরভিত্তিক দায়িত্বশীল নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো পৌরসভার উদ্দেশ্য। পৌরসভার কার্যকাল ৫ বছর। পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলর-গণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় রাজনীতির বিকাশ সাধনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।
৪. ক্লাব : স্থানীয় রাজনীতির প্রাথমিক প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হচ্ছে ক্লাব। স্থানীয় রাজনীতির বিকাশে স্থানীয় ক্লাবগুলো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। এ সকল ক্লাবে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যাতায়াত করেন। ফলে ক্লাব স্থানীয় রাজনীতির সাথে জনগণের সম্পৃক্তকরণের সেতুবন্ধন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. স্কুল পরিচালনা পরিষদ : স্কুল পরিচালনা পরিষদ ও স্থানীয় রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হিসেবে কাজ করে। স্কুল পরিচালনা পরিষদের সদস্যগণ স্কুলে সংশ্লিষ্ট থেকেও স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে থাকেন।
৬. মসজিদ কমিটি : মসজিদ কমিটি স্থানীয় রাজনীতির একটি প্রাতিষ্ঠানিক উৎস। মসজিদ কমিটির মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ দেশের ধর্ম ও রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্থানীয় রাজনীতির উৎস হিসেবে বিবিধ প্রতিষ্ঠ ান কমবেশি ভূমিকা রাখে। এ সবের মধ্যে মাদ্রাসা কমিটি, হাট ও বাজার কমিটি ছাড়াও বিভিন্ন সমবায় সমিতিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে।