অথবা, কী কী উপায়ে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায় বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানের পন্থাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, তোমার মতে কিভাবে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায় তার বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : বিচিত্র এ মানবজীবন। জীবনের এ বৈচিত্র্যের মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা, প্রতিবন্ধকতা এবং নৈরাজ্যতা মানুষের স্বাভাবিক চলার গতিধারাকে ব্যাহত করে এবং সুষ্ঠু সামাজিক উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে, যা সমাজ, রাষ্ট্র তথা ব্যক্তি জীবনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অধিকসংখ্যক মানুষ এর সংশোধন ও নিরসনের ইচ্ছা পোষণ করে। এসব অসুবিধাকে বলা হয় সামাজিক সমস্যা। পৃথিবীর সকল দেশ বা সমাজে
সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়, বরং আরও বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বাংলাদেশে সামাজিক সমস্যা সমাধানের উপায়সমূহ : বাংলাদেশ একটি সমস্যাপীড়িত দেশ। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। নিম্নে সামাজিক সমস্যা সমাধানের। উপায়সমূহ আলোচনা করা হল :
১. মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা : মৌলিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির পশ্চাতে অন্যতম প্রধান কারণ। এ সমস্যা বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। সুতরাং, সম্পদের সুষম বণ্টন, সম্পদের সদ্ব্যবহার প্রভৃতির মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তবেই সামাজিক সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া যাবে।
২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যার প্রধান কারণ দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। মাত্র ১,৪৭,৫৭০
বর্গকিলোমিটার এলাকায় লোকসংখ্যা ১৪০৪ মিলিয়ন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৮%। প্রতি বর্গকিলোমিটার
এলাকায় ৯১৬ জন লোক বাস করে। এ চিত্র এদেশের সমস্যার রূপকে ফুটিয়ে তোলে। সুতরাং, এ সমস্যা সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজন। জনসংখ্যার কুফল সম্পর্কে জনগণকে ওয়াকিবহাল করতে হবে এবং এ সমস্যা সমাধানে সামাজিক আন্দোলন (Social movement) গড়ে তুলতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, শিক্ষার বিস্তার, দেরিতে বিবাহ প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনসংখ্যার ঊর্ধ্বগতিকে
নিয়ন্ত্রণ করা যায়। চীনের দিকে তাকালে আমরা স্পষ্ট হতে পারি যে, তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাত্রা এমনভাবে করা হয়েছে যে, বর্তমানে প্রায় চার কোটি পুরুষ সঙ্গীহীন অবস্থায় থাকেন।
৩. বেকার সমস্যা সমাধান : বেকার সমস্যা বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যার কারণে নুষের আর্থসামাজিক পশ্চাৎপদের সূত্রপাত হচ্ছে, যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সর্ধেক লোক বেকার জীবনযাপন করছে। এ সমস্যা সমাধান অত্যন্ত জরুরি। সমাজে বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার,টেকনিক্যাল হার্যের উপর জোর দেওয়া, প্রশিক্ষণ পদ্ধতির বিস্তৃতি প্রভৃতির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। তাছাড়া হলকারখানার উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে শ্রমিক বেকারত্বকে হ্রাস করা যায় ।
৪. সম্পদের সুষম বণ্টন : বাংলাদেশের সমগ্র সম্পদের ৮০ ভাগ মাত্র ২০ ভাগ লোকের হাতে কুক্ষিগত, অপরপক্ষে, মাত্র ২০ ভাগ সম্পদ ৮০ ভাগ লোক ভোগ করে। সম্পদের এ অসম বণ্টন সমাজে শ্রেণীবৈষম্য সৃষ্টি
করছে, যা সামাজিক সমস্যার অন্তর্গত। ফলে সমাজে দারিদ্র্যের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থসামাজিক প্রতিযোগিতায় ঐসব সম্পদ বঞ্চিত লোক টিকে থাকতে পারছে না, যা সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। এরূপ পরিস্থিতিতে সম্পদের সুষম বণ্টনের বিকল্প নেই। জাকাত প্রথার উদ্ভব, সম্পদের সদ্ব্যবহার, যথার্থরূপে কর গদায় প্রভৃতির মাধ্যমে সম্পদের সুষম বণ্টন করা যায়। সুতরাং, সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা বাংলাদেশের অনগ্রসরতার অন্যতম প্রধান কারণ। এ সামাজিক সমস্যার কারণে সামগ্রিক উন্নয়ন বিশেষ করে অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এ সামাজিক সমস্যার নানাবিধ কারণ রয়েছে। এ কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যদি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।