বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি আলোচনা কর।

বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি আলোচনা কর।অথবা, বাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।অথবা, বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতির প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।অথবা, বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর।উত্তর৷ ভূমিকা : পরিবেশ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক। এটি মাটি, পানি, বায়ু, প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব প্রভৃতি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিস্টেম। এটা জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্নপরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এগুলোর যথার্থ সমাধান না করতে পারলে দেশের যথার্থ কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।বাংলাদেশের সামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি : স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস ও শিক্ষিতের হার বাড়লেও তা সামাজিক পরিবেশ উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। নিম্নে বাংলাদেশের বর্তমানসামাজিক পরিবেশ পরিস্থিতি আলোচনা করা হলো :১. অতিরিক্ত জনসংখ্যা : বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি। কিন্তু এ বিপুল জনসংখ্যার তুলনায় এদেশে ভূমি ও অন্যান্য সম্পদ এবং কাজের সুযোগ ও সুবিধা সীমিত, যার ফলে এ অতিরিক্ত জনসংখ্যা সমাজে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।২. দারিদ্র্য ও বেকারত্ব : বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কম, যার ফলে ব্যাপক বেকারত্ব বিদ্যমান। এ ব্যাপক বেকার জনসমষ্টি সমাজে নানা অসুবিধা সৃষ্টির মধ্যে সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করছে।৩. বস্তি সমস্যা সৃষ্টি : অপরিকল্পিত ও দ্রুত নগরায়ণের ফলে গ্রামের গরিব মানুষেরা শহরে এসে ভালো থাকার ব্যবস্থা করতে পারছে না, তারা বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছে। বস্তি প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।৪. ভাসমান মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি : বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি করতে মানুষ বাস্তুহীন হয়ে পড়ছে। এভাবে বাংলাদেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অতিরিক্তভাবে সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।৫. অপরাধ প্রবণতা বৃত্তি : বেকারত্ব, দারিদ্র্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক শোষণ প্রভৃতি কারণে সব দেশেই অপরাধ্য প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে, যা বিভিন্নভাবে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।৬. পতিতাবৃত্তি বৃদ্ধি : মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে এদেশের শহর ও গ্রাম উভয় অঞ্চলে পতিতাবৃত্তি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এটা আমাদের সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।৭. মাদকাসক্তির বিস্তার : আমাদের দেশ আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার এখানে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের মাদক উৎপাদন করা হয়। এ দু’টি কারণে এখানে মাদক অত্যন্ত সহজলভ্য। ফলে দেশের যুব ও তরুণ সমাজ ব্যাপকভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা সামাজিক পরিবেশকে ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে।৮. সম্পদের অসম বণ্টন : আমাদের দেশে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের সুফল এদেশের দরিদ্র মানুষের কাছে পৌছাচ্ছে না। ফলে সমাজে ব্যাপক সম্পদজনিত বৈষম্য দেখা দিচ্ছে, যা এদেশের সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।৯. সমস্যা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা ব্যাপকভাবে এঁদেশের সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।১০. দুর্নীতি বৃদ্ধি : ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশ পরপর তৃতীয় বারের মতো সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছে। দুর্নীতি সমাজকে চারদিক থেকে ছেয়ে ফেলেছে। এটা নানাভাবে এদেশের সামাজিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।১১. পারিবারিক ভাঙন ও সামাজিক ভাঙন : অপরিকল্পিত ও ব্যাপক শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফলে সমাজে ব্যাপকভাবে পারিবারিক ও সামাজিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। আবার দারিদ্র্য ও বেকারত্ব প্রভৃতি সামাজিক ও পারিবারিক বেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।ভাঙনে ভূমিকা রাখছে। এটা নানাভাবে আমাদের সামাজিকউপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা হতে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ উভয় ক্ষেত্র মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের যথার্থ উন্নয়নের জন্য এসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।