বাংলাদেশের সমস্যাগুলো লিখ। অথবা, বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা প্রয়োগ নেই কেন?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা প্রয়োগ নেই কেন?
অথবা,মনোবিজ্ঞানের মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে নীতিমালা বাংলাদেশে শিল্প উদ্যোক্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি লিখ। উত্তর:

ভূমিকা : শিল্প মনোবিজ্ঞানের ইতিহাস খুব বেশি পুরাতন নয়। ১৯১১ সালে এফ ডব্লিউ টেইলর (FW. Taylor) প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করেন। এটি শিল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনয়ন করে। প্রকৃতপক্ষে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শিল্পে মনোবিজ্ঞানের নীতির প্রয়োগ ধীরে ধীরে আরম্ভ হলেও ১৯৩০ সালের পর থেকেই শিল্প মনোবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা হিসেবে পরিবর্তন হয়। তবে বাংলাদেশে শিল্প মনোবিজ্ঞানের গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও নানা প্রকার অসুবিধার জন্য শিল্পকারখানায় এর প্রয়োগ এখনও আরম্ভ হয়নি ।

বাংলাদেশে শিল্প মনোবিজ্ঞানের সমস্যাসমূহ : নীচে শিল্প মনোবিজ্ঞানের এসব সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

১. পেশাজীবী ব্যবস্থাপকের অভাব : বাংলাদেশে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা এখনও একটি স্বাতন্ত্র্য পেশা হিসেবে স্থায়িত্ব লাভ করতে পারেনি। ব্যবস্থাপনার উন্নতি নির্ভর করে শিল্পের উন্নতির উপর। কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পক্ষেত্রে তেমন উন্নয়ন অর্জন করতে পারেনি। আর যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোতে যথাযথ মনোবিজ্ঞানের নিয়মনীতি অনুসরণ করা হয় না। এ কারণেই বাংলাদেশে পেশাজীবী ব্যবস্থাপকের অভাব দেখা যায়। তাছাড়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং পাঠসূচিও পেশাজীবী ব্যবস্থাপক তৈরির জন্য পর্যাপ্ত নয়।

২. কর্মী সরবরাহের পর্যাপ্ততা : বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ এবং কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ কর্মী পাওয়া যায়। তাই শিল্পব্যবস্থাপকরা এদের উপর চরম আধিপত্য বিস্তার করে, কম মজুরি দেয় অনেক সময় চরমভাবে ঠকায়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের মানবিক সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থাপকদের তেমন কোনো চাহিদা লক্ষ্য করা যায় না।

৩. গবেষণাগারে কাজ করার প্রবণতা : বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানিগণ মূলত গবেষণাগারে কাজ করার জন্য বেশি আগ্রহ য়ত্ব দেখায়। ফলে মনোবিজ্ঞানের নীতিকে বাস্তবে প্রয়োগপূর্বক প্রসিদ্ধ করে তোলার জন্য কোন ফলপ্রসূ ভূমিকা গ্রহণ করতে তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এ কারণে শিল্পে মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বকে ব্যবস্থাপকগণ অনুভব করতে পারেনি। শিল্প মনোবিজ্ঞানের নীতি বাস্তবে প্রয়োগ ও কার্যকর করার দায়িত্ব শিল্প | মনোবিজ্ঞানীদেরই। তাই তাই বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীদের নর্ভুল গবেষণাগারে কাজের ঝোঁক কমিয়ে তা বাস্তবে প্রয়োগের ফলপ্রসূ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

৪. মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব : আমাদের দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা শ্রমিকদের প্রেষণা, দক্ষতা শিল্প এবং মানসিকতা বুঝে তাদের আচরণকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণ করতে অসচেতন। কারণ এ ব্যাপারে তাদের যথাযথ ধারণারঅভাব রয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের নীতিমালা প্রয়োগ করে শিল্পের উৎপাদন যথেষ্ট হারে বৃদ্ধি করা সম্ভব এ ব্যাপারে জ্ঞানের অভাবের কারণে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের ব্যাপারে তারা কোন আগ্রহ প্রকাশ করে না।

৫. মনোবিজ্ঞানীদের বাস্তব জ্ঞানের অভাব : বাংলাদেশের মনোবিজ্ঞানীরা মূলত বই পড়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান সংগ্রহ করে তাদের ব্যবহারিক জ্ঞানের পরিধি খুবই কম। তাই তাদের চিন্তাধারাকে বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ পায় না। ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে তথ্যসংগ্রহ এবং বাস্তবভিত্তিক শিক্ষাও আমাদের দেশে নেই। তাই এদেশের মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যবহারিক জ্ঞানের পর্যাপ্ত অভাব দেখা যায় ।

৬. মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ ব্যয়বহুল : আমাদের দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা শিল্পক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগকে অহেতুক বাড়তি খরচ হিসেবে মনে করে। তাছাড়া কর্মীদের মূল্যবোধ, মানসিক, শারীরিক স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিও শিল্প মালিকগণ কোন প্রকার গুরুত্ব প্রদান করে না। তাই তারা এক্ষেত্রের ব্যয়কে কমিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে আগ্রহ প্রকাশ করে।

৭. কর্মী অসন্তোষ, নিম্ন মনোবল ও প্রেষণা : আমাদের দেশে কর্মী অসন্তোষ, কর্মীদের মনোবলের অভাব ও প্রেষণা ইত্যাদি বিষয়কে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় না। এসব সমস্যাকে যদি বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হতো, তাহলে অনন্ত শিল্প মনোবিজ্ঞানের নীতিসমূহ প্রয়োগ করা হতো। এতে শিল্পের উৎপাদন বৃদ্ধি পেত ।

৮. মানবীয় আচরণ : শিল্পপ্রতিষ্ঠানে মানবীয় আচরণ উৎপাদন ও শ্রম ব্যবস্থাপনায় যে ভূমিকা রাখে সে বিষয়ে এদেশের শিল্প মালিকরা অজ্ঞ। এ কারণে মাঝে মাঝে শিল্প শ্রমিকরা তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে। এতে করে শিল্পের ধারাবাহিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় এবং শিল্পের উৎপাদন কমে যায়।

৯. শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক : শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক ভালো হলে শিল্পের উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি পায়। আর সম্পর্ক খারাপ বা বিভেদপূর্ণ হলে উৎপাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরকম সম্পর্কের অবনতি সাধারণত মানসিক কারণে ঘটে। যা এদেশের শিল্প উদ্যোক্তারা বুঝতে অসমর্থ হন।

১০. ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও অনুভূতি : ব্যক্তিত্ব, আবেগ ও অনুভূতি আজও এদেশের শিল্পায়নে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো প্রকার ফলপ্রসূ অবদান রাখতে পারেনি। কিন্তু এ তিনটি বিষয় শিল্পায়নে বা যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশেষ গুরুত্বের দাবি করতে পারে।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ হওয়ার কারণে এদেশে শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যক্রম এখনো সেভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। তবে দেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন শিল্পের কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন, শ্রমিক অসন্তোষ, শ্রমিকদের শারীরিক, মানসিক অসুস্থতা, শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপক সম্পর্কের অবনতি ইত্যাদি কারণে শিল্প মনোবিজ্ঞানের নীতিমালার প্রকৃত প্রয়োগ অতি জরুরি হলেও উল্লিখিত কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না