অথবা, বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার পটভূমি উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থার ইতিহাস বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় গণতন্ত্র হচ্ছে একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী বহু আকাঙ্ক্ষিত শব্দ যা আধুনিক যুগের জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। এ গণতান্ত্রিক সরকারকে আইন বিভাগের সাথে শাসন বিভাগের সম্পর্কের ভিত্তিতে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি হচ্ছে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার এবং অপরটি হচ্ছে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার। সংসদীয় শাসনব্যবস্থার কল্যাণকামী রাজনৈতিক সংস্কৃতি এ দেশের মানুষের মৌলিক সাম্য ও স্বাধীনতার উপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ব্যাপক অর্থে সংসদীয় সরকারের উপর্যুক্ত সংজ্ঞা প্রদান করা হলেও বর্তমানে এরূপ শাসনব্যবস্থায় সংসদের প্রাধান্যের পরিবর্তে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসনব্যবস্থা বলে অভিহিত করে থাকেন। গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, কানাডাসহ প্রভৃতি দেশে এ শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
বাংলাদেশের সংসদীয় শাসনব্যবস্থা : ১৯৫৬ সালের সংবিধানের মাধ্যমে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলেও তা কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কেন্দ্ৰীয়
সরকারের মূলে কুঠারঘাত করে এবং ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রথমবারের মতো সামরিক শাসন জারি করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে নানা টালবাহনা শুরু করে অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ এক সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে দেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে কিন্তু ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা রহিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছিল সামরিক শাসন ও রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার অধীনে। এর ভিতরে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
উপসংহার : আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উদ্ভব হলেও সর্বশেষ ১৯৯০ সালে এর পরিপূর্ণ রূপের বিকাশ ঘটে। বিশ্বের অনেকদেশেই সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। বর্তমান সময়ে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা একটি জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা।