বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সম্পর্কে আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা কিরূপ উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সম্পর্কে ধারণা দাও।

উত্তরঃ ভূমিকা : বর্তমান কালে রাজনৈতিক দল প্রায় সকল ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান
হিসেবে স্বীকৃত। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক মতামতের প্রধান বাহন ও মাধ্যম। ইংল্যান্ডে একাদশ শতাব্দীতে দলীয় ব্যবস্থা প্রথম বিকশিত হয়। তবে উনবিংশ শতাব্দীতে দলীয় ব্যবস্থা এর বাস্তব রূপ নেয়। দলীয় ব্যবস্থার বিকাশ লাভের ক্ষেত্রে এবং এর স্বীকৃতি লাভের বিলম্ব ঘটার প্রধান কারণ হচ্ছে এই যে, গণতন্ত্র যেসব রাষ্ট্রে বিকাশ লাভ করেছিল সেগুলো শ্রেণি শাসিত রাষ্ট্র ছিল।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল সবসময়ই শ্রেণিস্বার্থের প্রতিভূ ছিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই যে, স্বাধীনোত্তর এ দেশটিতে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বপ্রথ ক্ষমতাসীন হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সময় এ দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালনার ক্ষেত্রে যা ইচ্ছা তাই নীতি গ্রহণ করেন। পাশ্চাত্য দেশসমূহের মত অনুসারে এ নলটির ঐ সময়ের কার্যকলাপ ছিল সম্পূর্ণভাবে অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক। এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশসমূহ বাংলাদেশের এ রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপকে গোষ্ঠীস্বার্থ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অসংখ্য দল বিদ্যমান রয়েছে এবং কোন দলের সাথে জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ৰা যোগাযোগ নেই। দলকে জনগণ কায়েমি স্বার্থবাদী বা বিশেষ শ্রেণিস্বার্থের প্রতিরূপে গণ্য করে থাকে। এ দলগুলো কতটা শ্রেণিস্বার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. আওয়ামী লীগ : ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনীতিবিদের সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি এ দলের প্রতি সমর্থন পোষণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ শুধু মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বার্থই সংরক্ষণ করে নি, বরং সময় শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।

২. বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি. এন. পি) : ১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ নামে একটি নতুন দল গঠিত হয়। প্রথম পর্যায়ে এ দলটি সামরিক ও ইসলামপন্থি লোকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। বর্তমানে এ দল দেশের সকল জনগণের জন্য প্রতিনিধি হিসেবে স্বার্থরক্ষা করে।

৩. জাতীয় পার্টি : বস্তুতপক্ষে জাতীয় পার্টি গঠিত হয় বি.এন.পি ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতৃবৃন্দ ও কিছু সুবিধাবাদী লোকদের নিয়ে। জাতীয় পার্টি জেনারেল এরশাদের ‘বেসামরিকীকরণ’ প্রক্রিয়ার ফলল। জাতীয় পার্টি মূলত বিভিন্ন শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে।

৪. জামায়াতে ইসলামি : জামায়াতে ইসলামি হলো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল। এ দলটি মুসলিম জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে এ দলটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে এবং পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করে। ফলে এ দলটি কোণঠাসার মধ্যে আছে। বর্তমানে এ নলটি জোট সরকার গঠন করে সমগ্র জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বলে দেয় যে, এদেশের রাজনৈতিক দল শ্রেণিস্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। দলীয় ব্যবস্থাকে কখনই নিরপেক্ষ বলা যায় না। যে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থে নিয়োজিত থাকে সে সমাজে শ্রেণিদ্বন্দ্ব থাকতে বাধ্য। শ্রেণিদ্বন্দ্বের কারণে ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষক হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়।