বাংলাদেশের মূলধন বাজারের বিভিন্ন উপাদানসমূহ কী কী ?

[ad_1]

👉 বাংলাদেশের মূলধন বাজারের বিভিন্ন উপাদানসমূহ কী কী ?

উত্তর ৷ ভূমিকা : মূলধন বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আদানপ্রদান হয় । বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগভিত্তিক মূলধন বাজার এখনো উন্নয়নের প্রাথমিক স্তরে রয়েছে । বাংলাদেশের মূলধন বাজারের যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা হচ্ছে প্রাথমিক শেয়ার ইস্যুকরণ , ঢাকায় এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে মধ্যবর্তী বাজারের শেয়ার ক্রয়বিক্রয় সম্পাদন করা ইত্যাদি । টেলিফোন , কম্পিউটার এবং অপরাপর আধুনিক প্রক্রিয়ায় অস্থায়ীভাবে লেনদেন সম্পাদনের ব্যবস্থা এখনো বাংলাদেশের মূলধন বাজারে গড়ে উঠে নি ।

বাংলাদেশে মূলধন বাজারের বিভিন্ন উপাদানসমূহ : যেসব উপাদানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের আদানপ্রদান হয়ে থাকে যা বিভিন্ন দেশের মূলধন বাজারে বিভিন্ন হয়ে থাকে । বাংলাদেশের মূলধন বাজারের বিভিন্ন উপাদানসমূহ নিম্নরূপ :

১. যোগান দিক : বাংলাদেশের মূলধন বাজারের যোগানের বিভিন্ন উপাদানসমূহ হচ্ছে নিম্নরূপ :

ক . পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিসমূহ : বাংলাদেশে বিভিন্ন পাবলিক লিঃ কোম্পানি বিভিন্ন মূল্যমানের শেয়ার ও বন্ড ইস্যু করে থাকে । এদের মধ্যে কিছু কোম্পানি ডিবেঞ্চার ইস্যু করে থাকে । প্রাথমিক শেয়ার বাজারে এরাই হচ্ছে প্রধান সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ।

খ . বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ : দেশীয় অনেক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক মূলধন সংগ্রহের জন্য তাদের শেয়ার ইস্যু করে থাকে । এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বিভিন্ন মূল্যমানের যেমন- ১০০ টাকা , ১,০০০ টাকা ইত্যাদি শেয়ার ইস্যু করে প্রাথমিক ঋণপত্রের বাজারে তা বিক্রির উদ্যোগ নেয় । এসব বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ মূলধন বাজারের প্রথম অংশ অর্থাৎ প্রাথমিক ঋণপত্রের বাজারে অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী বলা যায় ।

গ . উন্নয়ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশে কিছু কিছু উন্নয়ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান মূলধন বাজারে বিভিন্ন উপাদানের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে থাকে ।

ঘ . বীমা কোম্পানিসমূহ : বেসরকারি বিভিন্ন বীমা কোম্পানি বিভিন্ন মূল্যমানের শেয়ার ইস্যু করে থাকে , যা মূলধন বাজারে বিভিন্ন উপাদানের অন্যতম যোগানদাতা হিসেবে কাজ করে থাকে ।

ঙ . স্টক এক্সচেঞ্জ : যৌথ মূলধনী কোম্পানিসমূহ দীর্ঘমেয়াদি তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট হারে সুদ এবং মূল অর্থ ফেরত প্রদানের য়তা প্রদানপূর্বক যে অঙ্গীকারপত্র বাজারে ছাড়ে তাকে ঋণপত্র বলে । বাংলাদেশে ঋণপত্রের ব্যবহার ততবেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে নি । তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ বিভিন্ন ঋণপত্রের যোগানদাতা হিসেবে কাজ করছে ।

চ . সরকার : সরকারের নানা ধরনের সিকিউরিটি মূলধন বাজারে ক্রয়বিক্রয় হয় । এসব সিকিউরিটি মেয়াদ বিভিন্ন এবং সুদের হারও বিভিন্ন হয়ে থাকে । সরকারি যেসব সিকিউরিটি বাজারে ক্রয়বিক্রয় হয় তাদের মধ্যে ডাকঘর সঞ্চয়পত্র , বোনাস সঞ্চয়পত্র , প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র , ওয়েজ আর্নাস ডেভলপমেন্ট বন্ড ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

২. চাহিদা দিক : চাহিদার দিকে নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ বাংলাদেশের মূলধন বাজারে কাজ করে থাকে ।

ক . ব্যক্তিবর্গ : ঋণপত্রের প্রাথমিক ও দ্বিতীয় বাজারে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের উদ্বৃত্ত আয়ের একাংশ বিভিন্ন ধরনের শেয়ার , ইউনিক সার্টিফিকেট , বন্ড , ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে ।

খ . বাণিজ্যিক ব্যাংক : তফশিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ বাংলাদেশের মূলধন বাজারে অনুমোদিত ডিবেঞ্চার তাদের তহবিলের একাংশ বিনিয়োগ করে থাকে । এসব ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের সরকারি ও অন্যান্য ট্রাস্টি ঋণপত্রের বিপরীতে ঋণ প্রদান করে ।

গ . বিদেশি বিনিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান : সাম্প্রতিক কালে সরকার ঘোষিত বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কারণে বাংলাদেশের মূলধন বাজারে বিদেশি ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও অংশগ্রহণ করছে ।

ঘ . উন্নয়ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ : বিভিন্ন উন্নয়ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন – বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা , বাংলাদেশ পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা , শিল্প ব্যাংক , কৃষি ব্যাংক , সাধারণ বীমা করপোরেশন ইত্যাদি প্রাথমিক ও দ্বিতীয় ঋণপত্রের বাজার তহবিল বিনিয়োগ করে থাকে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে , বাংলাদেশের মূলধন বাজারে উপর্যুক্ত উপাদানগুলো বিরাজমান । সব উপাদানগুলো সঠিকভাবে কাজ করে না এজন্য উপাদানগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের মূলধন বাজার উন্নত করা সম্ভব । |

👉 স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের কার্যাবলির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর ।

উত্তর ভূমিকা : স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান । স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজার সাধারণত ১ বছরের কম ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজার ১ বছরের বেশি মেয়াদি হয় ।

স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের কার্যাবলির পার্থক্য : মূলধন বাজারকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :

১. স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজার ও ২. দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজার ।

১. স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজারে যেসব ঋণপত্রের মেয়াদ এক বছরের কম সেগুলো লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় । যেমন – স্বল্পমেয়াদি সরকারি ও করপোরেট ঋণপত্র এরূপ বাজারের লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় । অপরদিকে , যেসব ঋণপত্রের মেয়াদ এক বছরের বেশি সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় । সুতরাং স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজারে যেসব ঋণপত্রের লেনদেন হয় সেগুলো অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তরল । অপরদিকে , দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারে ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ারের তারল্যতা অনেক কম । কেননা এসব উপকরণ কেবলমাত্র মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে ভাঙানো সম্ভব ।

২. স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজারে বৃহত্তর লেনদেন সাধারণত সরকারি স্বল্পমেয়াদি বন্ড এবং বিভিন্ন করপোরেট সংস্থার স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্রের মধ্যেই সীমিত । স্বল্পমেয়াদি তহবিল উঠানোর কাজে সাধারণত সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থা এগুলো বিক্রি করে থাকে । এগুলোর ক্রেতা হিসেবে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিসমূহ প্রধান । অপরদিকে , দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের বৃহত্তর অংশ মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আবাসিক সম্পত্তির জন্য প্রদেয় মর্টগেজ ঋণের মধ্যে কেন্দ্রীভূত । এক্ষেত্রে জমিজমা , বিল্ডিং , যন্ত্রপাতি ইত্যাদি জামানতের বিপরীতেও ঋণ প্রদান এবং গ্রহণ করা হয় । বিভিন্ন উন্নয়ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরূপ দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজার তহবিলের উৎস হিসেবে কাজ করে । পক্ষান্তরে , এরূপ বাজারে ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে লিপ্ত থাকে ।

৩. স্বল্পমেয়াদি আর্থিক উপাদানের ঋণ ঝুঁকি দীর্ঘমেয়াদি উপাদানের তুলনায় অনেক বেশি বলা যায় । যেমন – সরকারি ট্রেজারি বিল , বন্ড ইত্যাদি ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে । অপরদিকে , দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারে এমন অনেক উপাদান আছে যেগুলোর ঋণ ঝুঁকি যথেষ্ট বেশি । যেমন – কোন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ইস্যুকৃত দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের পরিশোধে যথেষ্ট ঝুঁকি রয়েছে ।

৪. স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের মধ্যে ঋণপত্রাদির বাজার মূল্যের উঠানামার দিক থেকে তুলনা করা যেতে পারে । সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্রাদির মূল্যের উঠানামা উল্লেখযোগ্য হয় না । ফলে স্বল্পমেয়াদি মূলধন বাজারে কার্যরত ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতাদের নগদ অর্থের ঝুঁকি কম থাকে । অন্যদিকে , দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারে বিভিন্ন ঋণপত্রের মূল্যের উঠানামা যথেষ্ট হতে পারে । দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারের ঋণপত্রের মেয়াদ , অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে এরূপ অস্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি । ফলে দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারে কার্যরত ঋণদাতা এবং ঋণগ্রহীতাদের প্রায়ই নগদ অর্থের ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত পার্থক্য স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজারে লক্ষ্য করা যায় । সুতরাং স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মূলধন বাজার দুটি ভিন্ন প্রকৃতির ।

[ad_2]