বাংলাদেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর (উপজাতির) শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়েথাকার কারণ কী? আলোচনা কর।

বাংলাদেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর (উপজাতির) শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে
থাকার কারণ কী? আলোচনা কর।
অথবা,
অথবা, বাংলাদেশের উপজাতি সম্প্রদায়ের শিক্ষাক্ষেত্রে পিছনে পড়ার কারণসমূহ বিস্তারিত
বর্ণনা কর । উত্তর৷ ভূমিকা : সকল সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী আছে যারা নির্যাতিত হলেও চোখ বুঝে সহ্য করে, যারা ক্ষুধার্ত হলেও খাদ্যের জন্যে হাত প্রসারিত করে না, যাদের হাহাকার নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মূলত এ ধরনের সমস্যার লে রয়েছে শিক্ষাহীনতা। এসব সমস্যা দূরীকরণের প্রত্যয়ে ‘সর্বজনীন শিক্ষা চাই’ এ ধরনের শ্লোগান সবার মুখে মুখে Sociology of Education এ ধরনের গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে প্রান্তিক গোষ্ঠা নিয়ে আলোচনা করা হবে। ভেনে। বাংলাদেশের প্রান্তিক গোষ্ঠীর (উপজাতি) শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণসমূহ তুলে ধর। বাংলাদেশের উপজাতিদের শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণ : আমাদের দেশের উপজাতিরা শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ অনগ্রসর। উপজাতিদের শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কারণগুলো নিম্নরূপ :
১. ভাষাগত সমস্যা : আমাদের দেশে বসবাসকারী উপজাতিদের মধ্যে ১৮টির বেশি উপজাতীয় ভাষা আছে। এ দেশে প্রচলিত বাংলা ভাষার সাথে এসব ভাষার মিল নেই। প্রচলিত বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণে তারা অনীহা প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সকল উপজাতিদের ভাষায় শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
যার ফলে উপজাতিরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে।PLE
২. অর্থনৈতিক সমস্যা : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল একটি দেশ। এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় উপজাতিরা আরও বেশি অর্থনৈতিক
সমস্যায় জর্জরিত। তারা অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা না পেয়ে আরও Marginal হয়ে গেছে। দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ব্যয়ভার বহন তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। তারা প্রয়োজনীয় বইপত্র, পোশাকসহ শিক্ষা ব্যয় বহন করতে পারে না।
৩. পরিবেশগত সমস্যা : আমাদের দেশের উপজাতিদের বেশিরভাগ অংশের বসবাস পাহাড়ি অঞ্চলে। পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় একদিকে যেমন যাতায়াত সমস্যা তেমনি বিভিন্ন প্রতিকূলতা বিরাজ করে। শিক্ষাক্ষেত্রে যে পরিবেশ প্রয়োজন পাহাড়ি অঞ্চলে সেটা নেই। ফলে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত
|
৪. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমস্যা : আমাদের দেশে উপজাতিদের জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ আনুষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপজাতীয় সমাজে স্বল্পমাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাবে তারা শিক্ষার আলো থেকে দূরে অবস্থান করে।
৫. অভিভাবক শ্রেণির অনীহা : দরিদ্র এ দেশটির উপজাতীয় অভিভাবকগণ আরও বেশি দরিদ্র। দরিদ্র ও অভিভাবক মহল স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তারা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে এজন্যে একেবারেই অক্ষম। তাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মতো মানসিকতার বিকাশ তাদের মধ্যে হয় না। তারা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ
করে না। এভাবে অভিভাবক শ্রেণির অনীহার কারণে উপজাতীয় গোষ্ঠী শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ে।
৬. সামাজিক ঐতিহ্য : উপজাতীয় গোষ্ঠী নিজস্ব সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতি বেশ আগ্রহী থাকে। তারা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও প্রচলিত ঐতিহ্য রক্ষার্থে এগিয়ে আসে। উপজাতিদের ধারণা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করলে হয়ত তাদের সন্তানদের মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে। তারা হয়ত পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যকে ভুলে যাবে। এসব চিন্তা করে তারা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করে না।
৭. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য : প্রত্যেক জাতি, উপজাতির নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। এ সংস্কৃতিতে তারা তাদের সমগ্র জীবন প্রবাহের বিকাশ ঘটায়। তাদের সকল কর্মকাণ্ড, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য সংস্কৃতি নির্ভর। উপজাতীয়রা মনে করেন প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির প্রতিফলন নেই। এর ফলে তারা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকে।
৮. রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অভাব : স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কোন সরকার উপজাতিদের শিক্ষার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকার তাদের কাছ থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা লাভ করলেও তাদের শিক্ষার উন্নয়নে অগ্রসর হয়নি। জিয়াউর রহমান উপজাতিদের শিক্ষার ব্যাপারে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেটাও
প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে উপজাতিরা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে যায়।
৯. ধর্মীয় কারণ : পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ ধর্মবিশ্বাসী। বাংলাদেশের উপজাতিরাও বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাস করে। উপজাতিদের শিক্ষায় ধর্ম নিয়ে কোন আলোচনা করা হয় না। নিজস্ব ধর্মমত যে শিক্ষাব্যবস্থা আলোচনা করা হয় না, সে শিক্ষা তারা গ্রহণ করতে চায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশে বিদ্যমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হচ্ছে উপজাতি সম্প্রদায়। বাংলাদেশের উপজাতিদের শিক্ষাগত অবস্থান কিছুটা উন্নত হলেও তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে আছে। আর এ পিছিয়ে থাকার জন্য উপযুক্ত কারণগুলো ছাড়াও সচেতন মনমানসিকতা,
রক্ষণশীলতা প্রভৃতিও অনেকাংশে দায়ী।