অথবা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বরূপ আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পরিবেশ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক। এটি মাটি, পানি, বায়ু, প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব প্রভৃতি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিস্টেম। এটা জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এগুলোর যথার্থ সমাধান না করতে পারলে দেশের যথার্থ কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি : নিম্নে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. বায়ু দূষণ : দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ও শিল্পায়নের কারণে ব্যাপকভাবে করা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর বন ধ্বংসের পরিমাণ ৩-৪% যা সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ০.৮%। আবার অন্যদিকে, জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও খনিজ তেলের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বাতাসে CO2, CO, NO, প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আবার
শহরগুলোতে যথার্থ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবেও বায়ু দূষিত হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশের সর্বত্র বায়ু দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ঢাকা শহর পৃথিবীর সব থেকে বায়ু দূষিত নগরীর মধ্যে অন্যতম।
২. পানি দূষণ : শিল্পকারখানার বর্জ্যের যথার্থ ব্যবস্থাপনার অভাব, কৃষিকাজে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং পানি পথে ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন যানবাহনের পরিত্যক্ত তেল প্রকৃতির মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পানি দূষণ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে মাছের অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
৩. জলাভূমি ভরাট করে : বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যার বসতিও অন্যান্য চাহিদা মিটানোর জন্য ব্যাপকভাবে জলাভূমি ভরাট করার কারণে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর আবাসন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। আবার যথার্থ পানি ব্যবস্থাপনার অভাবে সমগ্র বাংলাদেশ ঘনঘন বন্যার কবলে পড়ছে।
৪. শব্দ দূষণ : সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী এ বিষয়ে তেমন সচেতনতা না থাকলে, ব্যাপারটি অত্যন্ত মারাত্মক অবস্থা ধারণ করছে। ঢাকার রাস্তাঘাট ও বসতি এলাকায় শব্দ দূষণের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার তুলনায় ২/৩ গুণ বেশি। ৩টা মানুষের মধ্যে বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। বিশেষত শিশুরা অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৫. মাটি দূষণ : কৃষিজমিকে ইটভাটা, কলকারখানা, বসতবাড়ি, হাট-বাজার প্রভৃতিতে পরিণত করার জন্য মাটি দূষণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। আবার কৃষিকাজে অধিক জৈব সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং জমির নিবিড় চাষের কারণেও মাটি দূষণ ঘটছে।
৬. প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি : সাম্প্রতিক কালে বন্যা, খরা, বিভিন্ন রোগের আক্রমণ, ঝড় প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত বেড়ে গেছে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে তিনটি বড় ধরনের ঝড়, চারটি প্রলয়ঙ্করী বন্যা, একটি সুনামি, দু’টি সাইক্লোন প্রায় চার লাখ মানুষের প্রাণ হরণ করেছে এবং প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের সম্পদহানি করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বাংলাদেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বেশ ভয়াবহ। দ্রুত অথচ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে জনজীবনে ঝুঁকির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে দেখা দিচ্ছে নানারকম মরণব্যাধি।