পরিবেশের প্রকৃতি বিশ্লেষণ কর।

অথবা, পরিবেশের স্বরূপ আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, পরিবেশের প্রকৃতি সবিস্তারে উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা :
পরিবেশ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক। এটি মাটি, পানি, বায়ু, প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব প্রভৃতি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিস্টেম। এটা জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এগুলোর যথার্থ সমাধান না করতে পারলে দেশের যথার্থ কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।
পরিবেশের প্রকৃতি : পরিবেশ হচ্ছে আমাদের চারপাশের ভৌত ও জৈবিক আবাস যার রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি। অর্থাৎ, আমাদের চারপাশের গাছপালা, পাহাড়, পর্বত, ঘরবাড়ি, দালান-কোঠা, বায়ু, পানি, মাটি ইত্যাদি সকল বস্তু মিলিয়েই আমাদের পরিবেশ। এছাড়া আমাদের চারপাশে নানারকম শক্তি ক্রিয়াশীল, যা আমাদের জীবনযাত্রাকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে। যেমন- ঝড়- ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, সামুদ্রিক জোয়ার, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। অন্যদিকে, পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব অবস্থানভেদে বিচিত্র জলবায়ু, উঁচুনিচু ভূপ্রকৃতি, দেশে সম্পদের ভারসাম্যহীনতা, জনসংখ্যার ঘনত্বের তারতম্য ইত্যাদি অবস্থায় টিকে আছে। উল্লিখিত সব বস্তু, শক্তি এবং অবস্থার সমন্বয়ে আমাদের পরিবেশ গঠিত। বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, “পৃথিবীর সবকিছু ভূপৃষ্ঠ থেকে ওজোন স্তর বিস্তৃত পরিমণ্ডলের বিদ্যমান আলো, বাতাস, পানি, শব্দ, মাটি, বন, পাহাড়, নদনদী, মানুষ, অবকাঠামো এবং গোটা উদ্ভিদ ও জীবজগত সমন্বয়ে যা সৃষ্ট তাই পরিবেশ।” ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ এ প্রকাশিত “পৃথিবীর উচ্চতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিরোধ কৌশল” প্রবন্ধে শিরীন সুলতানা পরিবেশের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা প্রদান করেন। যথা : ‘পরিবেশ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক, পরিবেশের মৌলিক উপাদানসমূহ যেমন- বায়ু, পানি, মাটি, বৃক্ষরাজি ও প্রাণিকূল যে পরিমাণে থাকলে মানুষ তথা প্রাণিকুল স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় বসবাস করতে পারে তাকে বিশুদ্ধ পরিবেশ বলে।”
পরিবেশ মানুষের জন্য নিম্নোক্ত তিনটি মৌলিক কাজ করে :
১. বাতাসসহ মানুষের থাকার জায়গা দেয় এবং সেসব আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সরবরাহ করে, যা মানুষের জীবনকে গুণগতভাবে সমৃদ্ধ করে।
২. পরিবেশ হচ্ছে কৃষি, খনিজ, পানি এবং অন্যান্য সম্পদের উৎস যা মানুষের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরিহার্য।
৩. পরিবেশ মানুষ সৃষ্ট সব আবর্জনা গ্রহণকারী হিসেবে কাজ করে এবং এর ব্যাপক অংশের পরিশোধনও নিশ্চিত করে।
উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পরিবেশকে সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীব ও জড় পরিবেশ এভাবে শ্রেণিবিভাগ করা হয়ে থাকে। এদের আবার অনেকগুলো উপবিভাগ বা শ্রেণি রয়েছে।