অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে দলাদলি (Faction) কিভাবে ক্ষমতা কাঠামো নির্ধারণ করে?
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে দলাদলির (Faction) ক্ষমতা কাঠামো নির্ধারণের প্রক্রিয়া উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দলাদলির প্রেক্ষিতে তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দলাদলির ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দলাদলির প্রেক্ষিত বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো হচ্ছে গ্রামীণ জীবনের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও ঘাত-প্রতিঘাতের ফলশ্রুতি, বা সামাজিক কার্যবিধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিশেষ একটি ব্যবস্থা যা দ্বারা গ্রামীণ লোকদের জীবনযাত্রার মান অটুট থাকে ।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতা কাঠামোতে দলাদলির প্রভাব : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো সমাজের অন্তর্গত বিভিন্ন শ্রেণি গোষ্ঠীর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার একটি ভারসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। কৃষক সমাজের উপর বিশিষ্ট লেখক হামজা আলাভী গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে Faction বা দল এর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, “Factions optly deseribes the most pervasive form of political interaction as it is observed in peasant socities; accounts of peasant societies are replete with examples of factionallism” অর্থাৎ, কৃষক সমাজে রাজনেতিক কর্মতৎপরতার প্রেক্ষিতে দলাদলির গুরুত্ব অপরিসীম। দলের প্রধান হচ্ছে ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্ব বা স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। এসব নেতাদের দলীয় অনুসারী হচ্ছে ভূমিহীন শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, বর্গাদার বা অন্যান্য দুর্বল শ্রেণির লোকজন। এ দল আদর্শ নিয়ে নয়, বরং সম্পদ, মর্যাদা, ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে তৈরি হয়। মূলত গ্রামীণ ক্ষমতাবানদের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে দলের আবির্ভাব এবং দরিদ্র লোকজন হলো দলের অপরাপর সদস্য। তবে দলের’ সংখ্যা গ্রামভেদে কমবেশি আছে। দলগুলো প্রাথমিকভাবে পাড়ানির্ভর সমাজকে ঘিরে তৈরি হয় এবং সমাজের মাতব্বর দলের প্রধান হিসেবে থাকে। আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী নিকোলাস গ্রামীণ দলাদলির পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা :
১. Faction বা দলগুলো সামাজিক সংঘর্ষের ফল।
২. রাজনৈতিক মতবিরোধ।
৩. দলাদলি কোনো যৌথ গোষ্ঠী নয় ।
৪. বিভিন্ন নেতার মাধ্যমে বিভিন্ন দলে অন্তর্ভুক্তি।
৫. দলাদলি সদস্যদের জ্ঞাতি ও পৃষ্ঠপোষকতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দলাদলিমূলক রাজনীতি একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিভিন্ন দ্বন্দ্ব বা মতানৈক্য থেকে দলাদলির সৃষ্টি।