অথবা,বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী? আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : আধুনিক জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গেই আমলাতন্ত্রের বিকাশ ও কার্যাবলি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এটি একটি সর্বজনীন ধারণায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বের প্রায় সকল সরকারি ব্যবস্থাই হলো কোনো না কোনো আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার নামান্তর। সাধারণত রাষ্ট্রের প্রসাশনিক কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা আমলা নামে পরিচিত।
এবং এদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাই হলো আমলাতন্ত্র।
বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ব্রিটিশ শাসন কাঠামোর উত্তরাধিকার হিসেবে পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর প্রশাসনিক সংস্থার পুনর্গঠন সংগঠন সংক্রান্ত বহু পদক্ষেপ নওয়া সত্ত্বেও আমাদের আমলাতন্ত্র পুরোপুরি ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক চরিত্র হারায়নি। নিম্নে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১.অবকাঠামো : বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ব্রিটিশ শাসনা আমলের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অনুরূপ। লক্ষ্যে পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তম চরিত্র ও কার্যকলাপের
১. ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক অবকাঠামো সচল করার উত্তীর্ণ নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্য হতে একদল তরুণ শিক্ষিত শ্রেণীকে অবাধ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচন
৪ নিয়োগ করা হয়। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে তারা পদোন্নতি লাভ করে প্রশাসনের শীর্ষে পৌছান।
২. পদসোপান ভিত্তিক সংগঠন : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন সম্পর্কের দ্বারা সংগঠিত। এখানে উপর হতে সিদ্ধান্ত, নির্দেশ এবং নিয়ন্ত্রণ নীচের দিকে প্রবহমান। আর নিম্নের দিক হতে আনুগত্য ও দায়িত্বশীলতা উপরের দিকে বাধমান। আঞ্চলিক ও দপ্তর প্রশাসনগুলোও ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন দ্বারা সংগঠিত। অর্থাৎ এখানে আনুভূমিক ও উল্লম্বিক উভয় সম্পর্ক বিদ্যমান ।
৩. আনুষ্ঠানিকতা : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বড় বৈশিষ্ট্য যে, তারা রুটিন কাজে অভ্যস্ত। অফিসের নিয়মের বাইরে তারা কিছু করতে নারাজ। এটি ছাড়া কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে পূর্ব সূত্রের প্রতি তাদের প্রগাঢ় আস্থা বিদ্যমান। ফলে তারা নতুন কিছু করতে উদ্যমী হন না
৪. লাল ফিতা : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে মস্তবড় অভিযোগ যে তারা কোনো কাজই সরাসরি করেন না। যে কোনো আবেদন বহু টেবিলে ঘুরে সিদ্ধান্ত নামক আলোর মুখ দেখে। এতে দেখা যায় যে, অনেকে অবসর প্রাপ্তির পর দীর্ঘদিন অফিসে ঘুরে সিদ্ধান্ত নামক আলোর মুখ দেখে। এতে দেখা যায় যে, অনেকে অবসর প্রাপ্তি পর দীর্ঘদিন অফিসে ঘুরে বিনা পেনশনে একদিন মৃত্যুবরণ করেন। সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর মৃত্যুর পরে তার ভাগ্যে পেনশনের আদেশ জুটে।
৫. নিরপেক্ষতা : বাংলাদেশের আমলাদের রাজনীতির দিক হতে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করার কথা এবং তারা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সে আদর্শকে লালন করার জন্য সচেষ্ট থাকেন। কিন্তু দেশের আনুপূর্বিক ঘটনা ও অবস্থা বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রকে রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে টেনে নিয়েছে। রাজনীতিতে ক্রমাগত অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের আকাঙ্ক্ষা তাদের নিরপেক্ষতাকে সুদূর পরাহত করেছে
৬. দক্ষতা : বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র আপাতত একটি দক্ষ প্রশাসনিক সংগঠন। প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে তাদের ভূমিকাকে খাটো করে দেখা যায় না। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক উচ্চপদগুলো যখন শূন্য হয়ে পড়ে তখন রাতারাতি পদোন্নতি দানের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম অভিজ্ঞদের দ্বারা শ
ূন্য পদগুলোর পূরণ করা হয়। এতে প্রশাসকের অদক্ষতা বেড়ে যায় এবং অদক্ষতার কারণে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে গড়িমসি দেখা দেয় এবং এর লশ্রুতিতে দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিকড় গেড়ে বসে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি নবীন দেশের প্রশাসনিক অবকাঠামোর অপরিহার্য অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র দক্ষ পেশাদার গোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠার প্রয়াস চালাচ্ছে।