Download Our App

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্র বা সরকারের ভূমিকা আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

উত্তর : ভূমিকা : আধুনিক রাষ্ট্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উন্নয়শীল দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হতে হয়। নিম্নে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

১. কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি উন্নতির কথা বিবেচনা করে। কৃষকদের ঋণ বিতরণ কার্যক্রমের ধারা সেচ, সার কীটনাশক ওষুধ সরবরাহের সুবিধা প্রদান করছে। কৃষকগণ যাতে সহজে ঋণ পেতে পারে সে জন্য বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।

২. অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন: দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা রাষ্ট্রের কর্তব্য। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই পরিবহন, যোগাযোগ, বিদ্যৎ উৎপাদন ব্যবস্থা প্রভৃতি এখনও উন্নতি লাভ করেনি। এই সমস্ত বিষয়গুলোর উন্নয়ন বেসরকারি খাতে সম্ভব নয়। সুতরাং রাষ্ট্রকেই এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হয়।

৩. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারঃ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের আহরণ ও সদ্ব্যবহার এর মাধ্যমে রাষ্ট্র উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নয়নশীল দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই এবং এ সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: অধিকাংশ অনুন্নত দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে সরকারি প্রচেষ্টার উপর নির্ভরশীল। সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে।

৫. মূলধন সংগ্রহঃ উন্নয়নশীল দেশ অভ্যন্তরীণ পুঁজির স্বল্পতার জন্য উন্নয়নের সাথে ধাবিত হতে পারে না। সরকার নিজ উদ্যোগে বৈদেশিক পুঁজি গ্রহণ করতে পারে এবং উপযুক্ত মুদ্রানীতি ও রাজনীতি দ্বারা অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে পুঁজি গঠন বৃদ্ধি করতে পারে।

৬. ভূমি সংস্কার নীতিঃ কৃষি জমি যাতে এক হাতে কেন্দ্রিভূত না থাকলে সেজন্য সরকার কঠোরভাবে ভূমি সংস্কার নীতি প্রণয়ন করেন। তার জন্য জমির সর্বোচ্চ সিলিং ৬০ বিঘায় নির্ধারণ। এর ফলে উদ্ধৃত্ত জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৭. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি: উন্নয়নশীল দেশের সমস্যাবলির মধ্যে জনসংখ্যার চাপ, কর্মসংস্থানের অভাব অন্যতম। সুতরাং জনসংখ্যার চাপ ও বেকার সমস্যাকে রোধ করার জন্য রাষ্ট্রকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

৮. শিল্প ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাঃ দেশে দ্রুত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বেসরকারি মালিকানায় শিল্প হস্তান্তরসহ ঋণ সুবিধার বন্দোবস্ত করেছে। শিল্পের উন্নয়নের জন্য দেশের বৃহৎ বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প ব্যাংক, শিল্প ঋণ সংস্থ নিয়োজিত রয়েছে।

৯. বর্তিবাণিজের উন্নয়ন:বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে নানা রকম অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে হয়। নিরপেক্ষ বাণিজ্য নীতি ও নিয়ন্ত্রিত আমদানি-রপ্তানি নীতির মাধ্যমে সরকার বৈদেশিক বাণিজ্যের, প্রতিকূলতা বহুলাংশে দূর করতে পারে।

১০. শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিঃ শিক্ষিত জাতি দ্রুত উন্নয়নের সহায়ক। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে জনসাধারণ যাতে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় তার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

১১. পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: উন্নয়শীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্র বহন করে এবং তা বাস্তবায়ন করে থাকে।

১২. জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন: জনস্বাস্থ্যও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উন্নয়নশীল দেশে রাষ্ট্রকে যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি সাধারণ ব্যাধি উচ্ছেদ করার জন্য নিরলস অভিযান চালাতে হয়।

১৩. প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ: দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল কিছু যাতে জনগণের দ্বারপ্রান্তে থাকে তার জন্য প্রশাসন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে করে সাধারণের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া
সম্ভব হয়েছে।

১৪. ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন: বৃষকদের বিভিন্ন ধরনের কৃষি ঋণের বোঝা লাঘব করার লক্ষ্যে “বাংলাদেশ ঋন সালিশী” অধ্যাদেশ-৩৬, ১৯৮৮ বলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৯৮৯ সালে ১লা জানুয়ারী ১৮ সদস্যের একটি ঋণ সালিশী বোর্ড গঠনের ঘোষণা প্রদান করেন।

১৫. সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধিঃ দেশের অত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষুদ্র অসল সঞ্চয় একত্রীকরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকসমূহের শাখা খোলার অনুমতি প্রদান করছে। ব্যাংকের শাখাসমূহ জনগণের ঋণ প্রদানের পাশাপাশি তাদের সঞ্চয় জমা করার জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছে।

১৬. গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা: সরকার দেশের বাস্তুহারা ও ভবঘুরে মানুষের স্থায়ী বসবাসের জন্য দেশের প্রতিটি থানায় গুচ্ছগ্রাম প্রতিষ্ঠা করার কার্যক্রম হাতে নেয়।

১৭. বাসস্থানের জন্য গৃহ নির্মাণ: সরকার প্রতিটি নাগরিকের জন্য বসতবাড়ি বা গৃহ নির্মাণের জন্য পর্যন্ত পরিমাণ ঋণ বিতরণ করছে।

১৮. বর্গাচাষীদের জন্য সরকারের ভূমিকা: বর্গাচাষীরা যাতে জমির মালিকের নিকট শোষণ ও হয়রানি হয় সেজন্য সরকার ভূমি নীতির মাধ্যমে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করেন।

(ক) কোনো বর্গাচুক্তি-৫ বৎসরের জন্য বৈধ থাকবে।

(খ) কোনো বর্গাদার জমি বর্গা নেয়ার পর মারা গেলে তার পরিবারে জীবত সদস্যগণ বর্গাজমি চাষ করতে পারবে।

(গ) বর্গাদারের কোনো সদস্য না থাকলে জামির মালিক তা নিজে চাষ করতে পারবে।

(ঘ) বর্গাদারের নিকট থেকে জমির মালিক ফসলের অংশ গ্রহণের সময় বর্গাদারকে রসিদ প্রদান করবেন।

(ঙ) মালিক জমি বিক্রি করলে বর্গাদার তা ক্রয় করার অধিকারি হবে।

উপসংহার: উপরিউক্ত করণে আধুনিককালে পৃথিবীর প্রায় সকল মিশ্র অর্থনৈতিক ও ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রীয় খাতের পরিধি ক্রমাগত প্রসার লাভ করছে।