বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় দূর করার জন্য কি কি সুপারিশ করবে?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তুমি কি পরামর্শ প্রদান করবে?

উত্তর : ভূমিকা:অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিদ্যমান বাধা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করার মাধ্যমেই উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। সাধারণভাবে বাংলাদেশের যেসব সমস্যা বিরাজ সেগুলো দূর করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ সুগম করার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।

১. সঞ্চয় বৃদ্ধি ও মূলধন সৃষ্টিঃ বাংলাদেশের দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র ভাঙ্গার অন্যতম প্রধান উপায় হলো দেশের অভ্যন্তরে সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে সঞ্চয়ের হার বৃদ্ধি করা একান্ত দরকার। আর সঞ্চয় বৃদ্ধি পেলে মূলধন সৃষ্টি হবে।

২. শিক্ষার বিস্তারঃ দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূর করতে হবে। ব্যাপক শিক্ষবিস্তারের মাধ্যমে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

৩. কৃষির উন্নতি: অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশের কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথমে কৃষির উন্নতি সাধন করতে পারে।

৪. শিল্পের উন্নতিঃ আমাদের দেশের উন্নতি, সাধন করতে হলে দ্রুত শিল্পের উন্নতি সাধন করতে হবে। শিল্পের উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভবপর নয়।

৫. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণঃ জনসংখ্যা ক্রমবর্ধনার হারে বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে তা সম্পদের সাথে সামঞ্জস্যশীল করতে পারলে উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুতগতি লাভ করবে।

৬. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে জীবন যাত্রার মান বাড়বে। সুখে-স্বাচ্ছন্দে দিন কাটবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। জনগণের মাঝে এ বোধ সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হলে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে।

৭. প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার: যথাযথ উৎপাদন কৌশলের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জন্য দেশে নতুন খনিজ ও শক্তি সম্পদ আবিষ্কার এবং সংরক্ষণ প্রয়োজন।

৮. বিদেশি প্রযুক্তি গ্রহণ: উৎপাদনের ক্ষেত্রে লাগসই দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভব ব্যয় বহুল ও সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। তাই দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেয়ে স্বল্প মেয়াদে আমাদের জন্য বিদেশি প্রযুক্তি গ্রহণ করাই যক্তিযুক্ত।

৯. দক্ষ উদ্যোক্তা সৃষ্টি: উদ্যোক্তা শ্রেণিই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করে থাকে। বাংলাদেশে দক্ষ উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলা হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা অবদান রাখবে।

১০. কারিগরি শিক্ষার প্রসারঃ কারিগরি বিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে জনসাধারণকে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলা কৌশল সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে কারিগারি জ্ঞান আমদানি করতে হবে।

১১. দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টিঃ দেশের বিশাল জনসম্পদকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করবে।

১২. সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: দ্রুত উন্নয়নের স্বার্থে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অপরিহার্য। সুতরাং সুই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৩. অর্থনৈতিক অবকাঠামো গঠনঃ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাধা দূরীকরণে রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, যোগাযোগ, পরিবহন, বিদ্যৎ ও গ্যাস সরবরাহ ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

১৪. আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি: আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিয়োগিতার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুবই দুর্বল। সকল কুটনীতির মাধ্যমে দেশীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে।

১৫. অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিঃ সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, গোঁড়ামী, অন্ধ বিরোধিতা ইত্যাদি অপসারণ করে উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

১৬. খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনঃ দেশে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতির দরুণ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা খাদ্য আমদানিতে ব্যয় হয়। ফলে কাঙ্খিত খাতে মূলধন বিনিয়োগের পরিমাণ কমে যাবে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে কাষ্টর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা শিল্প মূলধন হিসেবে ব্যবহার করলে উন্নয়নে গতি ত্বরান্বিত হবে।

১৭. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি করতে হলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

১৮. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান পূর্বশর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। স্থিতিশীল সরকার না থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

১৯. দুর্যোগ প্রতিরোধ: প্রতি বছর বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি ঘটে থাকে। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে। উপসংহারঃ উপরিক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উল্লেখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাঁধাগুলো অপসারিত হবে এবং দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।