উৎস : আলোচ্য অংশটুকু কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত ‘ছায়ানট’ কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত ‘চৈতী হাওয়া’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : যে চৈতী হাওয়ার মাঝে কবি তাঁর প্রিয়ার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন সেই পরিবেশ আবার ফিরে এসেছে বলে কবি এখানে দাবি করেছেন।
বিশ্লেষণ : কবির জীবনে প্রেম এসেছিল এক চৈতালি দিনে। প্রেম চিরন্তন। চৈতালি হাওয়ায় কবি তাঁর প্রিয়ার দরশন পেয়েছিলেন এবং কবিজীবনে প্রেমের শিহরণ জেগেছিল। প্রেমের উন্মাদনায় আজ কবি পাগল প্রায়, তাঁর প্রিয়া অসীম শূন্যতার মাঝে হারিয়ে গেল। তবুও কবি তাঁর প্রিয়াকে খুঁজে ফিরছেন চৈতালি দিনে কবিপ্রিয়া ডালপালা দুলিয়ে হাসত। স্থলপদ্ম কবিপ্রিয়ার গাল স্পর্শ করতো, বকুল ফুলের শাখা ব্যাকুল হতো এবং ফসলের ক্ষেত আন্দোলিত হতো। বুলবুল পাখি চৈতালি মাসের রাতে গজল গাইত। সুন্দরী ভূঁই তারকা কবিপ্রিয়ার দোলন খোঁপার উপর লজ্জা ছড়িয়ে দিত। কিন্তু আজ সে প্রিয়া অসীমের মধ্যে হারিয়ে গেছে। চৈতী হাওয়া শুধু কবির বিরহ বাড়িয়ে দিচ্ছে। চৈতালি প্রকৃতি শুধু কবি হৃদয়কে বেদনাবিদ্ধ করে, প্রকৃতি নানা রঙে সজ্জিত হয় কিন্তু কবিমন পুলকিত হয় না। চৈত্র আসে, চৈত্র যায়, কিন্তু কবির হারিয়ে যাওয়া প্রিয়তমা আজও নিরুদ্দেশ। প্রিয়তমার সন্ধান তবু থামে না। তিনি অন্তহীন প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করছেন একদিন না একদিন তাদের মিলন হবেই। বিশেষ করে চৈতী প্রকৃতি কবির প্রিয়া হারানোর দুঃখকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
মন্তব্য : চৈতী হাওয়া কবিহৃদয়ে দুঃখের প্রলেপ ছড়িয়ে দিয়েছে। কেননা, কোন এক চৈতালি দুপুরে তিনি তাঁর প্রেমিকার সন্ধান পেয়েছিলেন।