অথবা, ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহ্ বলতে কী বুঝ?
অথবা, ফানা ও বাকা কাকে বলে?
{ অথবা, ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহ সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, ফানা ও বাকা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সুফিবাদ হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ মতবাদ। সুফিবাদে ফানা ও বাকা বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।.সুফিবাদের যে সাধনা তার সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে ফানা ও বাকা। সুফি সাধক প্রথমে ফানা পর্যায়ে উপনীত হয় এবং আর এ সাধনার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর একাকী তার মনের মধ্যে বদ্ধমূল করে নেন। আর এ পর্যায়টি হলো ‘বাকা’ পর্যায়
।
ফানা : ফানা একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিলুপ্তি প্রাপ্ত বা ধ্বংস প্রাপ্ত। মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছাতে বিলুপ্তকরণের অর্থ হচ্ছে ফানা। সুফি সাধক জাগতিক কোন বস্তুর প্রতি মোহগ্রস্ত নন, বরং তিনি আল্লাহর প্রতি তার লক্ষ্য Distiny নিবদ্ধ রাখেন। মূলত নিজের কামনা, বাসনা, প্রবণতাসমূহ বিলোপের মাধ্যমে আল্লাহর সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সাধক অনন্ত জীবনের পূর্ণতা প্রাপ্তির পথে অগ্রসর হন। সুফিবাদ অনুসারে আমাদের যতগুলো প্রবণতা বা মানবীয় গুণ রয়েছে তা বিলোপ সাধন না করলে পরম সত্তা বা আল্লাহর অভিজ্ঞতার নূর বা কাশফের জ্ঞান লাভ সম্ভব হয় না। প্রকৃত সুফি বলতে বুঝায় যার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই এবং নিজেও অন্যের দাস নন। আল্লাহ্ ছাড়া তাই ফানাকে ফানাফিল্লাহও বলা হয়ে থাকে।
বাঁকা : বাকা স্তরে সুফিগণ আল্লাহর চিরন্তন সত্তায় বিলীন হয়ে আল্লাহর সাথে একাকার হয়ে যান। আল্লাহর সত্তায় অধিষ্ঠিত এ বাকা অবস্থায়ই মনসুর আল হাল্লাজ ঘোষণা করেছিলেন, ‘আনাল হক’ বা আমিই পরম সত্য, সুফি সাধনার পূর্ণতা আসে ফানাফিল্লাহ ও বাকাবিল্লাহরি মাধ্যমে। এভাবে মুরিদ ও মুর্শিদের মধ্যে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মুবিদ নিজেকে মুর্শিদের কাছে সমর্পণ করেন। এ স্তরে মুর্শিদের ইচ্ছাই মুরিদের ইচ্ছায় পরিণত হয় এবং মুরিদ নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মুর্শিদের কাছে বিলীন করে দেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফি সাধনার পূর্ণতা ঘটে ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লায় উপনীত হওয়ায় মধ্যে। ফানা ও বাকা সুফি সাধনার সর্বোচ্চ স্তর। ফানা ও বাকা উভয়ই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং ফানা ও বাকা উভয়ের গুরুত্ব মুসলিম দর্শনে অনস্বীকার্য।