ফলিত মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ কী?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি কী? অথবা, প্রায়োগিক মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি কী? উত্তর:

ভূমিকা : মানুষ, প্রাণীর আচরণ এবং মানসিক প্রক্রিয়া নিয়ে মনোবিজ্ঞান গঠিত। আর মনোবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হলো মানুষ এবং প্রাণীর আচরণ। কারণ মানুষ ও প্রাণীর আচরণ বাহির হতে পরখ করা যায়। মানুষের আচরণের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, বিধায় সেগুলোকে কেন্দ্র করে মনোবিজ্ঞানের নানা প্রকার শাখা বিকাশ লাভ করেছে। তার মধ্যে একটি অন্যতম শাখা মানুষের প্রাত্যহিক সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানের এই প্রায়োগিক তথা ব্যবহারিক শাখাটিই ফলিত মনোবিজ্ঞান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

ফলিত মনোবিজ্ঞানের স্বরূপ বা প্রকৃতি : ফলিত মনোবিজ্ঞান সাধারণ মনোবিজ্ঞানের একটি ব্যবহারিক শাখা। এ শাখা মনোবিজ্ঞানের প্রকৃত বা তত্ত্বীয় জ্ঞানকে ভিত্তি করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। প্রত্যেক ফলিত মনোবিজ্ঞানীই মনোবিজ্ঞান সম্বন্ধে বাস্তব এবং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করেন এবং সে জ্ঞানকে দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করে থাকেন। বিশ শতকের প্রথমদিকে বেশকিছু সংখ্যক মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ফলিত মনোবিজ্ঞানের অনুশীলন শুরু হয়। এ সময় মনোবিদ ক্যাটেল তার মানসিক অভীক্ষা তৈরি করেন, বিনে সিমোঁ বুদ্ধি অভীক্ষার উদ্ভাবন করেন। তখন আরও অনেক মনোবিজ্ঞানী শিক্ষা, ব্যবসায়, শিল্প, চিকিৎসা এবং আইন আদালতে মনোবিজ্ঞানের প্রয়োগ সম্পর্কে ধারণা প্রদান করেন। তখন থেকে ফলিত মনোবিজ্ঞানের ক্রমধারা এখন পর্যন্ত চলে আসছে। নানা প্রকার শাখা তৈরি হওয়ার পর ফলিত মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি এবং পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ মনোবিজ্ঞানের শরীরতত্ত্বমূলক শাখা, ব্যক্তির ইন্দ্রিয়, পেশী, গ্রন্থি, মস্তিষ্ক ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাথে দৈহিক সংগঠনের সম্পর্ক নির্ণয়ে কার্যসম্পাদন করে যাচ্ছে। এর শিক্ষা মনোবিজ্ঞান শাখা শিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা, শিক্ষাদানের কার্যকর কৌশল নির্ণয়, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, শিক্ষকের মনোভাবের প্রভাব, ছাত্রদের মূল্যায়ন, ছাত্রশিক্ষক এবং ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, পার্থক্য নিরূপণ এবং শ্রেণিকক্ষ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগ হচ্ছে। ফলিত মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি এবং পরিসর শিল্পক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বেশি প্রসারিত। মানবজীবনের একটি বিরাট ক্ষেত্র হিসেবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরেই মনোবিজ্ঞানের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কর্মচারী নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ, কর্মচারী নির্বাচন, স্বাস্থ্য সমস্যা, দুর্ঘটনায় তাদের সমস্যা, তাদের আর্থিক চাহিদা, সহকর্মীদের সাথে তাদের সম্পর্ক প্রভৃতি কাজ বিজ্ঞানসম্মতভাবে সম্পাদন করার ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান বর্তমানে, উন্নত ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া মানসিক রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা সম্পাদন করা ফলিত মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। মানসিক এবং শারীরিক অসুস্থতাকে প্রথমে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা এবং তার কারণ অনুসন্ধান করা যেমন মনোচিকিৎসকদের দায়িত্ব, তেমনি রোগ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রবর্তন করাও তাদের কাজ।

উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের উল্লিখিত দিকগুলো ছাড়াও মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান আরও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। মানুষের জীবনযাত্রার মান যত উন্নত হচ্ছে এবং পৃথিবী যত শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষের মানসিক সমস্যা তত প্রকট আকার ধারণ করছে। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপক হারে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহৃত হচ্ছে। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে প্রায় অর্ধেক লোক মানসিক সমস্যাতে ভোগে, তাই ঐ সমস্ত দেশে মনোবিজ্ঞানীদের চাহিদা ব্যাপক।