অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠী বলতে কী বুঝ?
অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠী কাকে বলে?
অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সকল সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী আছে যারা নির্যাতিত হলেও চোখ বুজে সহ্য করে, যারা ক্ষুধার্ত হলেও খাদ্যের জন্যে হাত প্রসারিত করে না, যাদের হাহাকার নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মূলত এ ধরনের সমস্যার মূলে রয়েছে শিক্ষাহীনতা। এসব সমস্যা দূরীকরণের প্রত্যয়ে ‘সর্বজনীন শিক্ষা চাই’ এ ধরনের শ্লোগান সবার মুখে
মুখে ভেসে উঠে। মূলত Sociology of Education এ ধরনের গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে প্রান্তিক গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রান্তিক গোষ্ঠী (Marginal group) : সমাজবিজ্ঞানে গোষ্ঠী বলতে সামাজিক গোষ্ঠীকে বুঝায়। সাধারণভাবে মানুষ গোষ্ঠীগত জীবনে অভ্যস্ত। অর্থাৎ, মানুষ সমাজে মিলেমিশে বসবাস করার মাধ্যমেই এক একটি সামাজিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। কতকগুলো ব্যক্তি পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যদিয়ে যখন একত্রে বসবাস করে, তখন তাকে গোষ্ঠী বলে। গোষ্ঠী প্রসঙ্গে Robert Sutherland বলেছেন, “ভূতাত্ত্বিকগণ যেমন শিলা, জ্যোতির্বিদগণ যেমন তারকা নিয়ে আলোচনা করেছেন, তেমনি আবশ্যকীয় বিষয় হিসেবে গোষ্ঠী নিয়েও আলোচনা করেন।” গোষ্ঠী শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। সমাজ মনোবিজ্ঞানে Group বলতে বুঝায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির সমষ্টি যারা নিজেদের স্বার্থে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় রত হয়। আর Marginal শব্দটির অর্থ হলো প্রান্তিক বা শেষ কিংবা অবহেলিত, অনুন্নত, অপেক্ষাকৃত নিচু ইত্যাদি। শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণভাবে Marginal বলতে বুঝায় যারা শিক্ষায় কম সুবিধাভোগী। যেমন- পুরুষ শাসিত সমাজে নারী, শিল্পায়িত সমাজে Marginal বলতে বুঝায় গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়, জাতীয়ভাবে ভিন্ন সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে উপজাতীয় গোষ্ঠী এবং শিক্ষিত সমাজে অশিক্ষিত বা নিরক্ষরই প্রান্তিক। অর্থনীতির ভাষায় Marginal শব্দটি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ভোগের ক্ষেত্রে একটি ইউনিট বেশি ভোগ করার ফলে অতিরিক্ত যে উপযোগিতা পাওয়া যায় তাকে Marginal বলে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী প্রান্তিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা প্রদানের প্রয়াস পেয়েছেন। নিম্নে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
কিম্বল ইয়ং (Kimball Young) তাঁর ‘Hand Book of Social Psychology’ গ্রন্থে বলেছেন, “For our purposes we shall define a group as two or more persons as a state of social interaction.”
টি. বি. বটোমোর (T.B. Bottomore) বলেছেন, “সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত মানবগোষ্ঠীই হলো সামাজিক গোষ্ঠী।” গোষ্ঠীর মধ্যে একটা মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিও বিদ্যমান। ওগবার্ন ও নিমকফ (Ogburn and Nimkoff) তাঁদের ‘A Hand Book of Sociology’ গ্রন্থে বলেছেন, “Whenever two or more individuals come together and influence one another, they may be said to constitute a social. group.” সমাজবিজ্ঞানী Karl Marx এর মতে, “সভ্যতা বিকাশের প্রতিটি স্তরে উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে এক শ্রেণির মানুষ শোষিত হয়, যাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বলা হয়।” যেমন-
১. দাস সমাজে দাস,
২. সামন্ত সমাজে ভূমিদাস ও
৩. পুঁজিবাদে শ্রমিক ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী হচ্ছে সমাজের এমন এক শ্রেণি যারা অন্যান্য শ্রেণির তুলনায় অবহেলিত, অনুন্নত ও অপেক্ষাকৃত নিচুমানের।’ অন্যভাবে বলা যায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী হচ্ছে একপ্রকার সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী।