প্রশ্নমালা পদ্ধতি বলতে কী বুঝ? প্রশ্নমালার প্রকারভেদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতি কী? প্রশ্নমালা পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও। প্রশ্নমালা পদ্ধতির প্রকারভেদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণায় প্রশ্নমালা ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতির শ্রেণিবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সাধারণভাবে বলা যায়, কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিষয় সংশ্লিষ্ট এবং বিষয় সম্পর্কিত কতিপয় প্রশ্নের সুবিন্যস্ত লিখিত সমাহারই হলো প্রশ্নমালা। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। বিশেষকরে জরিপ পদ্ধতিতে উপাত্ত সংগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে প্রশ্নমালা ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই ।
প্রমাণ্য সংজ্ঞা : সমাজ গবেষকগণ প্রশ্নমালাকে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যেমন-
গুড এবং হাট (Goode and Hatt) এর মতে, “In general the word questionnaire refers to a device for securing answers to questions by using a form which the respondent fills himself.” সাধারণভাবে প্রশ্নমালা হচ্ছে ফরম (Form) ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করার একটি কৌশল, যা উত্তরদাতা নিজে পূরণ করেন । বোগারডাস (Bogardus) প্রশ্নমালার সংজ্ঞায় বলেছেন, “A questionnaire is list of questions sent to a number of persons for them to answer. It secures standardised results that can be tabulated and treated statistically.” অর্থাৎ, প্রশ্নমালা হচ্ছে কতিপয় প্রশ্নের তালিকা যেগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য কতিপয় ব্যক্তির নিকট প্রেরণ করা হয়। এটি মানসম্মত ফলাফল নিশ্চিত করে যেগুলো সারণিবদ্ধ করা যায় এবং পরিসংখ্যানিকভাবে ব্যবহার করা যায় । উইলকিনসন এবং ব্যান্ডারকার (Wilkinson and Bhandarkar) প্রশ্নমালার সংজ্ঞায় বলেছেন, “A questionnaire consists of a number of questions printed (or typed) in definite order on a form (or set of forms)” অর্থাৎ, ফরম (Form) এর উপর সুনির্দিষ্ট ক্রমানুসারে মুদ্রিত কতিপয় প্রশ্নের সমন্বয়ে প্রশ্নমালা গঠিত। দেবেন্দ্র ঠাকুর (Devendra Thakur) বলেছেন, “প্রশ্নমালা হচ্ছে কোনো বিশেষ সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত জনগণের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার লক্ষ্যে সংগঠিত ও পর্যায়ক্রমিকভাবে তৈরিকৃত কতিপয় প্রশ্নের একটি সেট (Set)।”
প্রশ্নমালার প্রকারভেদ : নিম্নে প্রশ্নপত্রের প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো :
১. কাঠামোগত প্রশ্নপত্র : কাঠামোগত প্রশ্নপত্রে প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্ট, বাস্তব ও পূর্বনির্ধারিত থাকে ।
২. অকাঠামোগত প্রশ্নপত্র : কাঠামোগত প্রশ্নপত্রের বিপরীত অবস্থাই হলো অকাঠামোগত প্রশ্নমালা । এ প্রশ্নমালার প্রশ্নগুলো সুনির্দিষ্ট এবং পূর্বনির্ধারিত থাকে না । এছাড়া প্রশ্নপত্রের উত্তরে কাঠামোর উপর ভিত্তি করে প্রশ্নগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয় । যথা :
১. মুক্ত প্রশ্নপত্র : যে প্রশ্নপত্রের উত্তর প্রদানের বিষয়টি উম্মুক্ত রাখা হয় তাকেই মুক্ত বা খোলা প্রশ্নপত্র বলে ।
২. আবদ্ধ প্রশ্নপত্র : প্রশ্নমালার ব্যবহৃত প্রশ্নগুলোর সম্ভাব্য উত্তরসমূহ যে প্রশ্নমালায় দেয়া থাকে কিংবা নির্ধারণ করা থাকে তাকে আবদ্ধ প্রশ্নমালা বলে। এছাড়া প্রশ্নপত্রের অপর দুটি শ্রেণিবিভাগ আছে-
১. আনুষঙ্গিক প্রশ্নপত্র : যে প্রশ্ন অন্য প্রশ্নের উপর নির্ভরশীল তাকেই আনুষঙ্গিক প্রশ্নপত্র বলে। এ প্রশ্নপত্র সবার জন্য প্রযোজ্যও নয়।
২. মেট্রিক্স প্রশ্নপত্র : গবেষণায় ব্যবহৃত একাধিক প্রশ্নের উত্তর যখন একই ধাঁচের হয় তখন নির্দিষ্ট ছক ব্যবহারের
মাধ্যমে সেসব প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করা হয়। ঐ নির্দিষ্ট ছকের মাধ্যমে উত্তর সংগ্রহ করাকে মেট্রিক্স পদ্ধতি বলে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানে তথ্য বিশ্লেষণের জন্য প্রশ্নমালা প্রণয়নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয় । প্রশ্নমালা তৈরিতে একদিকে যেমন নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তেমনি যাতে প্রশ্নগুলো সহজ ও আকর্ষণীয় হয় সেদিকে লক্ষ রাখা হবে