প্রশ্নঃ বাজেট হলো অর্থনৈতিক নীতির হাতিয়ার ব্যাখ্যা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাজেট হলো অর্থনৈতিক নীতির হাতিয়ার ব্যাখ্যা কর ।

উত্তর ৷ ভূমিকা : বর্তমান সময়ে বাজেটকে জাতীয় অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয় । বাজেটের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।

বাজেট হলো অর্থনৈতিক নীতির হাতিয়ার : নিম্নের বিশ্লেষণ থেকে এটি প্রমাণ করা যাবে :

১. দারিদ্র্য বিমোচন : আজকাল দারিদ্র্য বিমোচন নীতি বাস্তবায়ন হয় বাজেট নীতির সাহায্যে । সরকার বেকার ভাতা , দুঃস্থ ভাতা , মাতৃ ভাতা , বৃদ্ধ ভাতা , শিক্ষা বৃত্তি , কাজের বিনিময়ে খাদ্য ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করতে পারে ।

২. স্বয় ও বিনিয়োগ : বাংলাদেশের মতো এমন উন্নয়নশীল দেশে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ একদমই কম । বেশি পরিমাণ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয় । জাতীয় সঞ্চয় বিনিয়োগ বাড়াতে কর নীতি ও ব্যয় নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

৩. আয় বৈষম্য হ্রাস : রাজস্বনীতির অন্যতম লক্ষ্য হলো আয় বৈষম্য হ্রাস । সরকার প্রগতিশীল কর , বিলাসবহুল দ্রব্যে উচ্চ কর , দরিদ্রদের পণ্যে ভর্তুকি , দরিদ্রের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে আয় বৈষম্য কমাতে পারে । যা বাজেটের মাধ্যমেই সম্ভব ।

৪. বাজেট হলো আয় কটনকারী হাতিয়ার : আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়ে থাকে । প্রতিটি দেশই কল্যাণকর রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে । এ ধরনের কল্যাণ রাষ্ট্রে প্রচুর সম্পদের প্রয়োজন । বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে সরকার এর জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারে ।

৫. মানব সম্পদ গঠন : যে কোন দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো সেই দেশের মানব সম্পদ । অদক্ষ জনবল দিয়ে দেশের কোনপ্রকার অগ্রগতি সম্ভব হয় না বলে জনশক্তিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাসহ তাদের সকল সমস্যা সমাধানের বিষয় বাজেটে উল্লেখ থাকতে হবে ।

৬. অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিতকরণ : কৃষি ও শিল্পখাতে উন্নয়নের জন্য সরকার বাজেটকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে । কৃষিখাতে এবং শিল্পখাতে কর রেয়াত , কর অবকাশ , ভর্তুকি প্রদান ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে এতে করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো আরো বেশি গতি পাবে ।

৭. সম্পদ স্থানান্তর : একমাত্র বাজেটই পারে সম্পদকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সরকার যদি দামি বা বিলাসবহুল দ্রব্যের উপর কর বাড়িয়ে দেয় তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিলাসবহুল দ্রব্যে বিনিয়োগ কমিয়ে দেবে এবং প্রয়োজনীয় খাতে বি নয়োগ করবে । এভাবে অকেজো সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব ।

৮. আয় ও বিনিয়োগ : বাংলাদেশের মতো অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় কম এবং ব্যাপক মাত্রায় বেকার । সরকার ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়নে সহায়তা দিতে পারে এবং উৎসাহিত করে তুলতে পারে । এর মাধ্যমে ছোটখাটো শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং মূলধন বাড়ার কারণে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় তা বেকারত্ব দূরীকরণে সাহায্য করে ।

৯. ভারসাম্য উন্নয়ন : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশে আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট থাকে । অতি বেশি মুনাফা করার জন্য বড় বড় শিল্পকারখানাগুলো রাজধানীর আশেপাশে শিল্পকারখানা স্থাপন করে যা পণ্য উৎপাদন শুধুমাত্র শহরবাসীর জন্য হয়ে থাকে । বাজেটের মাধ্যমে এটি হ্রাস করে গ্রামেও শিল্প স্থাপন করা সম্ভব ।

১০. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেট নিয়ন্ত্রণ : মুদ্রাস্ফীতির সময়ে অর্থনীতি অতিরিক্ত ক্রয়ক্ষমতার সম্মুখীন হয় । এ অবস্থায় সরকার যদি উদ্বৃত্ত বাজেট নীতি প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করে তাহলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে ।

১১. আর্থসামাজিক অবকাঠামো : বাংলাদেশের অবকাঠামোগত অবস্থা উন্নত নয় । যথাযথ টেলিযোগাযোগ , পরিবহন , পানীয়জল , বিদ্যুৎ , গ্যাস , পানি ইত্যাদি শিল্পের বিকাশ না হলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় । এছাড়া রয়েছে শিক্ষা এবং গবেষণা খাত । সরকারি বাজেটের মাধ্যমে এসব খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে ।

১২. ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ : অর্থনৈতিক নীতির হাতিয়ার হিসেবে সরকার ঘাটতি বাজেটের অর্থসংস্থান করে সামাজিক বেকারত্ব ঘোচাতে পারে । এ ধরনের বাজেট নীতির মাধ্যম দেশে চাহিদা , দামস্তর , মুনাফা , নিয়োগ , আয় ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।

উপসংহার : এসব আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় , দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রধান হাতিয়ার হলো বাজেট ।

[ad_2]