[ad_1]
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়গুলো বর্ণনা কর ।
উত্তর। ভূমিকা : দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে জনসাধারণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হলে উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে । বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারে :
১. কৃষির উন্নয়ন : কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড । কৃষিকে অবহেলা করে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয় । কাজেই কৃষি উন্নয়নের উপর আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে । পুরোনো পদ্ধতির চাষাবাদ পরিহার করে কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে । কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে খাদ্য সমস্যা দূর হবে । জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ।
২. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার : দেশের জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে হলে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে । কারিগরি জ্ঞানের উন্নয়ন এবং প্রয়োজনবোধে বিদেশ থেকে প্রযুক্তি আমদানি করে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে ।
৩. মহিলা সমাজের উন্নয়ন : বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক হলো মহিলা । সুতরাং মহিলাদের অবস্থার উন্নতি না করে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যাবে না । গ্রামীণ মহিলা অবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়া এবং মহিলাদের জন্য আলাদা সমবায় আন্দোলনের উপর জোর দিতে হবে ।
৪. শিল্পোন্নয়ন : পাকিস্তানি আমলে এ অঞ্চলে শিল্পোন্নয়নের গতি মন্থর ছিল । কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদেরকে অতীতের সব ব্যর্থতা মুছে ফেলে শিল্পোন্নয়নের জন্য একটি সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে । শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বাড়বে ।
৫. জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণ : আমাদের দেশে বর্তমানে জনসংখ্যা যে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা রোধ করতে না পারলে উন্নয়নের সব পরিকল্পনাই বানচাল হয়ে যাবে । জাতি হিসেবে আমাদের টিকে থাকতে হলে পরিবার পরিকল্পনা সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ উত্তাল তরঙ্গকে অবশ্যই রোধ করতে হবে ।
৬. বন্যা নিয়ন্ত্রণ : বন্যা প্রতি বছর আমাদের বহু ফসল নষ্ট করে । বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য অবিলম্বে সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার । তাতে আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়বে ।
৭. মূলধন গঠন : মূলধন ছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয় । সঞ্চয় থেকে মূলধন গড়ে উঠে । সুতরাং দেশের জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে হবে । জনসাধারণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করার জন্য দেশের গ্রামাঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যাংকের শাখা খোলা উচিত ।
৮. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি : অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিবহন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল । দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনসাধারণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হলে আমাদের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে ।
৯. শিক্ষার বিস্তার : শিক্ষা অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি । আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক অশিক্ষিত । ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের সক্রিয় সহযোগিতা পাওয়া যায় না । সুতরাং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার অপরিহার্য ।
১০. অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হ্রাস : বাংলাদেশে রাজস্ব বাজেটের ব্যয় হ্রাস করে উদ্বৃত্ত অর্থ উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ করতে হবে । দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে সরকারকে উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে ।
১১ . কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ : শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের মাথাপিছু আয় বাড়াতে হলে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে শ্রমিকদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে হবে ।
১২. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : দেশের শিল্পোন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা আমদানির জন্য প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন । বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে হলে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব । এ লক্ষ্যে অবিলম্বে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার ।
[ad_2]