প্রশ্নঃ বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির আর্থসামাজিক কুফল আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির আর্থসামাজিক কুফল আলোচনা কর ।

উত্তর- ভূমিকা : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে জনশক্তি রপ্তানির যেমন সুফল আছে তেমন জনশক্তি রপ্তানির কুফলও আছে ।

জনশক্তি রপ্তানির কুফল : নিম্ন জনশক্তি রপ্তানির কুফলগুলো আলোচনা করা হলো :

১. ধনবৈষম্য বৃদ্ধি : যেসব ব্যক্তি বা পরিবার বিদেশে কর্মরত তাদের আর্থিক অবস্থা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যেসব ব্যক্তি দেশে কর্মরত তাদের আর্থিক অবস্থা প্রবাসীদের তুলনায় তেমন ভালো নয় । ফলে সমাজে ধনী – গরিবের বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

২. সামাজিক বৈষম্য : বর্তমান সময়ে দেখা যায় সমাজে যার অর্থ বেশি তার প্রভাবও বেশি । যেসব পরিবারের লোকজন বিদেশে কর্মরত তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে তারা নানারকম সুবিধা ভোগ করে থাকে । ফলে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পায় ।

৩. শ্রেণী বৈষম্য : জনশক্তি রপ্তানি বাংলাদেশের সমাজজীবনে মানুষের মধ্যে শ্রেণী বৈষম্য আরো বাড়িয়ে তুলে ধনসম্পদের পরিমাণ যাদের বেশি তারা সন্তানদের বিদেশে পাঠানোর সুযোগ গ্রহণ করে । এর ফলে সমাজে ধনী – গরিব শ্রেণী বৈষম্য আরো বৃদ্ধি পায় ।

৪. আঞ্চলিক বৈষম্য : বাংলাদেশের সব অঞ্চলের লোক সমহারে বিদেশে গমন করে না । অনেক অঞ্চলে প্রত্যেক বাড়ি থেকেই লোকজন বিদেশে কর্মরত আছে । আবার অনেক অঞ্চলে প্রতি গ্রাম থেকে দু’একজন বিদেশে কর্মরত । ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দেখা দেয় ।

৫. মেধাপাচার : উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার , বিশেষজ্ঞ , শিক্ষক , বিজ্ঞানী প্রভৃতি মেধাবী মানুষজন বিদেশে চাকরি নিয়ে চলে যাওয়াকে মেধাপাচার বলে । জনশক্তি রপ্তানির আওতায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই বিপুল সংখ্যক মেধাপাচার হয়ে যাচ্ছে । এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ।

৬. জমির মালিকানা হস্তান্তর : বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো না । ফলে বিদেশে গমনের সময় জমি বিক্রয় করতে হয় । আবার বিদেশে কর্মরত লোকজন তাদের অর্জিত আয়ের দ্বারা দেশে জমি ক্রয় করে । এভাবে জমির মালিকানা হস্তান্তর হয়ে থাকে ।

৭. জমির মূল্য বৃদ্ধি : প্রবাসীরা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ঝুঁকিমূলক ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে চায় না । এ কারণে তারা জমি ক্রয়কে উত্তম বিনিয়োগ হিসেবে মনে করে । এর ফলে জমির মূল্য বৃদ্ধি পায় ।

৮. অনুপস্থিত ভূস্বামী সৃষ্টি : অনেক সময় দেখা যায় যারা বিদেশে কর্মরত কিন্তু পরিবার শহরে বসবাস করে । ঐ সব ব্যক্তি বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ দ্বারা জমি ক্রয় করলে অনুপস্থিত ভূস্বামীর সৃষ্টি হয় । যা কৃষ্টির উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ।

৯. মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি : বৈদেশিক রেমিট্যান্স দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ায় , ক্রমক্ষমতা বৃদ্ধি করে , চাহিদা বৃদ্ধি করে ফলে দামস্তরও বৃদ্ধি পায় ।

১০. বিলাস দ্রব্যের আমদানি বৃদ্ধি করে : জনশক্তি রপ্তানির ফলে একশ্রেণীর মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্তি ঘটে । তাদের বিলাস দ্রব্যের চাহিদা মিটানোর জন্য বিদেশ থেকে বিলাস দ্রব্যের আমদানি বাড়ে । এর ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয় ।

১১. দাম্পত্য কলহ বৃদ্ধি : অনেক দিন বিদেশে কর্মরত থাকার কারণে স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় । অনেক সময় অবৈধ অসামাজিক কার্যক্রমও বৃদ্ধি পায় ।

১২. প্রতারণা বৃদ্ধি পায় : জনশক্তি রপ্তানির ফলে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল চক্র তৈরি হয়েছে । এদের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছে বিদেশে জেল খেটে , মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হয়েছে ।

১৩. নারী ও শিশু পাচার বৃদ্ধি : প্রায়ই পত্রিকা বা অন্যান্য গণমাধ্যমে দেখা যায় জনশক্তি রপ্তানির নামে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিদেশে নারী ও শিশু পাচারের মতো অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে ।

১৪. সাংস্কৃতিক বিরোধ : আমাদের দেশের যেসব লোক বিদেশে কর্মরত তারা বিভিন্ন দেশের সামাজিক , পারিবারিক ও রাজনৈতিক রীতিনীতি দ্বারা প্রভাবিত হয় । এদেশে ফিরে তারা ঐ সব অপসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালায় ফলে দেশের সংস্কৃতির সাথে বিদেশি সংস্কৃতির বিরোধ দেখা দেয় । এভাবে সামাজিক মূল্যবোধও বিনষ্ট হয় ।

উপসংহার : সুতরাং বলা যায় , বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির যেমন সুফল আছে তেমনি কুফলও আছে । তাই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে । তা না হলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে ।

[ad_2]