প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলো আলোচনা কর ।

উত্তর- ভূমিকা : মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা । দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এদেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় : নিম্নে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় আলোচনা করা হলো :

১. আৰ্থিক ব্যবস্থা : মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম প্রধান উপায় হলো আর্থিক ব্যবস্থা । অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা আর্থিক ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার । অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ এদেশে করা হয় তা নিম্নরূপ :

ক . ব্যাংক হাস্ত বৃদ্ধি : দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক , ব্যাংক হার বাড়িয়ে দেয় ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়িয়ে দেয় । এর ফলে ঋণের পরিমাণ কমে যায় এবং অর্থের যোগান হ্রাস পায় ।

খ . নগদ জমার অনুপাত : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের রিজার্ভের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা রাখতে হয় । দেশে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ অনুপাত বাড়িয়ে দেয় । ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদান ক্ষমতা হ্রসা পায় এবং মুদ্রাস্ফীতিও হ্রাস পায় ।

গ . খোলাবাজারি কারবার : কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক সময় খোলা বাজারে সরকারি ঋণপত্র বিক্রয় করে ব্যাংক সৃষ্ট অর্থের পরিমাণ কমাতে চেষ্টা করে । এরূপভাবে ঋণপত্র বিক্রয় করলে ক্রেতাগণ তাদের নিজ নিজ বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর চেক কেটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাওনা মিটিয়ে থাকে । এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণদান ক্ষমতা কমে যায় । এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে ঋণপত্র বিক্রয় করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ।

২. রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যবস্থা : সরকারের রাজস্ব আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত ব্যবস্থাকে রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যবস্থা বলা হয় । এ নীতির মাধ্যমে সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে তা নিম্নরূপ :

ক . সরকারি ব্যয় হ্রাস : সরকারি ব্যয় দেশের মোট ব্যয়ের পরিমাণের একটা বড় অংশ । কাজেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারি ব্যয় কমানো উচিত ।

খ . অতিরিক্ত কর ধার্য : কর ধার্য করলে জনগণের ব্যয়যোগ্য আয় কমে যায় । ফলে মোট ব্যয়ের পরিমাণ কমে যায় এবং মুদ্রাস্ফীতিও হ্রাস পায় । তবে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো উচিত ।

গ . সরকার কর্তৃক ঋণ গ্রহণ : মুদ্রাস্ফীতি নিরোধের জন্য সরকার জনসাধারণের নিকট হতে অধিক পরিমাণ ঋণগ্রহণ করে থাকে । এতে জনসাধারণের উদ্বৃত্ত আয় সরকারের হস্তগত হওয়ায় তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পায় ।

ঘ . সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদান : সরকার সুদের হার বাড়িয়ে জনগণকে সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে পারে । এর ফলে ব্যয়ের পরিমাণ কমে যাবে এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পাবে ।

৩. প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাসমূহ : মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশে আর্থিক ও রাজস্ব নীতি ছাড়াও প্রত্যক্ষ উপায় গ্রহণ করা হয়ে থাকে । নিম্নে প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাসমূহ উল্লেখ করা হলো :

ক . সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ : মুদ্রাস্ফীতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন সরকার দ্রব্যসামগ্রীর সর্বোচ্চ দাম বোধে দিয়ে দামস্তর একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে ।

খ . ন্যায্য মূল্যের বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন : মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকল্পে বাংলাদেশে ন্যায্য মূল্যে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় করার জন্য কেন্দ্র স্থাপন বা ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে । এর ফলে দামস্তর হ্রাস পায় এবং মুদ্রাস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় ।

গ . মজুরি নিয়ন্ত্রণ : মজুরি বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় । এ কারণে আইন করে বা আপেশের মাধ্যমে মজুরি বৃদ্ধি বন্ধ রাখা হয় ।

ঘ . মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং ব্যবস্থা : অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমানো যেতে পারে । ” } ও . মুদ্রা অবৈধকরণ : বাংলাদেশ সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক সময় পুরাতন মুদ্রা অবৈধ ঘোষণা করে নতুন মুদ্রার প্রচলন করে । কোন কোন সময় বেশি মূল্যের নোটকে অচল করে দেয়া হয় ।

চ . গচ্ছিত অর্থ আটক : মুদ্রাস্ফীতির সময় ধনী ব্যক্তিরা যেন বেশি অর্থ ব্যয় করতে না পারে সেজন্য অনেক সময় সরকার তাদের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের সম্পূর্ণ বা কিছু অংশ সাময়িকভাবে আটক করে রাখে । এর ফলে এ অংশ ব্যয় করা সম্ভব হয় না । ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমে ।

উপসংহার : মুদ্রাস্ফীতি একটি দেশের জন্য কল্যাণকর বা অকল্যাণকরও হতে পারে যখন মুদ্রাস্ফীতির হার বেশি হয়ে যায় । বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুদ্রাস্ফীতি একটি জটিল ও গুরুতর সমস্যা । তাই সরকারকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত উপায়গুলোকে ব্যবহার করতে হবে । তাহলেই মূল্যস্তর জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে ।

[ad_2]