প্রশ্নঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের অন্তরায়সমূহ কী কী ?

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের অন্তরায়সমূহ কী কী ?

উত্তর ৷ ভূমিকা : অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরিত হয় তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপর্যাপ্ত । পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় ছিল জিডিপি – এর মাত্র ২১.১০ % । প্রবাসী বাঙালিদের রেমিটেন্সসহ জাতীয় সঞ্চয় ছিল জিডিপি – এর ৩০.০২ % । কিন্তু বিনিয়োগ ছিল ২৪.৪১ % । অতএব বিনিয়োগ ব্যয়ের সবটুকু অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়ে অর্থায়ন সম্ভব হয় নি । অধিকন্তু উল্লেখ্য যে মাথাপিছু আয় দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ অনেক হওয়া উচিত , যা অর্জনের জন্য বর্তমান অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় নিতান্তই অপর্যাপ্ত ।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের অন্তরায় : অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহের এ অপর্যাপ্ততার কারণসমূহ নিম্নরূপ :

ক . সরকারি খাতে সম্পদ আহরণের অন্তরায় :

১. কর কাঠামোর অস্থিতিস্থাপকতা : বাংলাদেশে জাতীয় আয় বাড়লে যথেষ্ট পরিমাণে সরকারের কর রাজস্ব বাড়ে না । আশির দশকে কর স্থিতিস্থাপকতা ছিল .৯১ । অর্থাৎ জাতীয় আয় যত শতাংশ বাড়ে তার চেয়ে কম শতাংশ কর রাজস্ব বাড়ে । কর কাঠামোর এ দুর্বলতা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের সীমাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ।

২. রাজস্ব ব্যয়ের আধিক্য : বাংলাদেশ সরকারের বিশাল রাজস্ব ব্যয়ের কারণে বাজেটে রাজস্ব উদ্বৃত্ত কম হয় । বাজেটের প্রায় ৭ % প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হয় । এভাবে অন্যান্য কিছু খাতে যে ব্যয় হয় তা প্রয়োজনাতিরিক্ত বলে বিভিন্ন সেমিনারে মতামত ব্যক্ত হয়েছে । এভাবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অপব্যয় রাজস্ব উদ্বৃত্তের স্বল্পতার জন্য দায়ী ।

৩. নিম্ন কর / জিডিপি অনুপাত : বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের কর রাজস্ব দেশের জিডিপি – এর প্রায় ১২ % । এ কর / জিডিপি হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অতি নিম্ন । উল্লেখ্য যে ২০১০-১১ সময় কালে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের গড় কর অনুপাত ছিল প্রায় ১১.৮ % । অতএব বাংলাদেশে কর কাঠামার দুর্বলতার কারণে কর আকারে অভ্যন্তরীণ সম্পদের আহরণ কম হয় ।

৪. সরকারি খাতে উৎপাদন ও সেবা প্রতিষ্ঠানের লোকসান : সরকারি খাতে যে , মিল কারখানা বা পরিবহন ও যাতায়াত সংস্থা আছে সেগুলো স্থায়ীভাবে লোকসান দিচ্ছে । ফলে সরকারি খাতে উদ্বৃত্ত হ্রাস পাচ্ছে ।

৫. প্রত্যক্ষ কর রাজস্বের স্বল্পতা : বাংলাদেশের কর কাঠামোতে পরোক্ষ করের প্রাধান্য একটি দুর্বলতা । প্রত্যক্ষ কর যথাযথভাবে আদায় করা যায় না বলে বাংলাদেশে সরকারি খাতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ কম হয় ।

খ . বেসরকারি খাতে সম্পদ আহরণের অন্তরায় :

১. স্টক এক্সচেঞ্জের দুর্বলতা : উন্নত স্টক এক্সচেঞ্জ থাকলে সাধারণ মানুষ তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সহজে বিনিয়োগ করতে পারে । কিন্তু বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জের ঘন ঘন উত্থানপতন ও অসৎ ম্যানিপুলেশনের কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রতারিত হয় । ফলে বেসরকারি সম্পদ আহরণের অন্তরায় সৃষ্টি হয় ।

২. স্বল্প মাথাপিছু আয় : ব্যক্তি খাতে উদ্বৃত্ত সম্পদ সৃষ্টির প্রধান অন্তরায় স্বল্প মাথাপিছু আয় । আয়ের স্বল্পতার কারণে পরিবারসমূহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সঞ্চয় করতে ব্যর্থ হয় ।

৩. ব্যাংক ব্যবস্থার দুর্বলতা : বাংলাদেশে পরিবারসমূহ যে স্বল্প পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করে তা অনেক ক্ষেত্রে মূলধন গঠনের জন্য আহরিত হয় না । বাংলাদেশে ব্যাংক ব্যবস্থা এখনো যথেষ্ট বিস্তৃত ও দক্ষ নয় বলে সম্পদ আহরণের এ অন্তরায় সৃষ্টি হয় ।

উপসংহার : উপরে বর্ণিত কারণে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে উন্নয়নের জন্য সম্পদ আহরণ অপর্যাপ্ত হয় । বস্তুত সম্পদের স্বল্পতার প্রধান কারণ অনুন্নত অর্থনীতি ।

[ad_2]