প্রশ্নঃবাংলাদেশে সরকারি ঋণের যৌক্তিকতা কী ?

[ad_1]

প্রশ্নঃবাংলাদেশে সরকারি ঋণের যৌক্তিকতা কী ? আলোচনা কর ।

উত্তর ৷৷ ভূমিকা : অর্থসংকট মোকাবিলায় সরকারকে আদৌ ঋণ গ্রহণ করা উচিত কি না তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে । আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ সহ ক্লাসিক্যাল , কেইন্সীয় সরকারের ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন ।

সরকারি ঋণের যৌক্তিকতা :

নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :

১. কেইলীয়দের চিন্তাধারা : ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী অর্থনীতির সাফল্য সম্বন্ধে নিজেই সন্দিহান ছিলেন কেইন্স । তিনি মনে করেন পূর্ণ নিয়োগে পৌঁছার জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন । তিনি অপূর্ণ নিয়োগের ধারণা ব্যবহার করেন । কেইন্সীয় অর্থনীতিদেরা বিশ্বাস করেন ঋণ দ্বারা সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণ করা হয় । প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল দেশে সরকারের বাজেটর দুটি অংশ থাকে । একটি হলো রাজস্ব বাজেট , অন্যটি হলো উন্নয়ন বাজেট । রাজস্ব বাজেট চলতি কল্যাণ গুরুত্ব প্রদান করে কিন্তু উন্নয়ন বাজেটে ভবিষ্যৎ আয় , উৎপাদন , নিয়োগ ও কল্যাণ গুরুত্ব পায় । সরকার যেহেতু ঋণ গ্রহণ করে উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করে তাই সরকারি ঋণ সার্বিক বাজেটে ভারসাম্য সৃষ্টি করে । যে জন্য সরকারি ঋণ অর্থনীতির উপর তেমন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না । অর্থাৎ সরকারি ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা আছে ।

২. ক্লাসিক্যালদের মতামত : সরকারি ঋণের বিপক্ষে বক্তব্য রাখেন ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণ । তাদের মতে ব্যক্তিতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সম্পদ দক্ষভাবে ব্যবহার হয় । পূর্ণ নিয়োগ আপনা আপনি অর্জিত হয় বলে সরকারের তেমন ভূমিকা থাকে না । ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের মধ্যে Adam Smith , Hume সরকারি ঋণের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন । তাদের বক্তব্য অনুসারে সরকারি ঋণ পরিশোধ এবং সুদ পরিশোধের জন্য সমপরিমাণ কর আরোপ করলে জনগণের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে । সরকারি ঋণ সমাজে এক শ্রেণীকে অন্য শ্রেণীর উপর নির্ভরশীল করে এবং আয় বৈষম্য সৃষ্টি করে । এছাড়া সরকারি ব্যয় অপচয়মূলক । সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে বিলাসবহুল কাজে ব্যয় করবে । যা কল্যাণ বাড়াবে না । ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদদের অনেকেই করকে ঋণের চেয়ে বেশি পছন্দ করেন তার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :

ক . সরকারি ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ করতে ভবিষ্যতে আরো বেশি করভার বহন করতে হয় , যা যুক্তিসংগত নয় ।

খ . অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি হতে পারে সরকারি ঋণের ফলে । এটি মনে রাখার বিষয় যে সরকারি ঋণ সবসময়ই ক্ষতিকর একথা ঠিক নয় । সরকার যদি গৃহীত ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করে তাহলে ভবিষ্যতে ঋণের টাকা পরিশোধে অত্যধিক করের সাহায্য নাও লাগতে পারে ।

৩. আধুনিক অর্থনীতিবিদদের চিন্তাধারা : সরকারি ঋণের আওতা প্রসারিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় । আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন মন্দা বা বেকারত্ব অবস্থায় সরকারি ঋণ গ্রহণের যৌক্তিকতা রয়েছে । মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকারি ঋণ মুদ্রাস্ফীতি দমনে ভূমিকা রাখতে পারে । তবে সরকারি ঋণ জটিল প্রকৃতির এবং পরিচালনা করা কষ্টকর ।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি , উৎপাদনের উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারি ঋণ নেয়া গ্রহণযোগ্য।

[ad_2]