প্রবেশন ব্যবস্থার কর্মকৌশল সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, প্রবেশনের শর্তসমূহ তুলে ধর। প্রবেশন ব্যবস্থার কর্মকৌশল সম্পর্কে বিশ্লেষণ কর।
অথবা, প্রবেশনের শর্তসমূহ উল্লেখপূর্বক এর কর্মকৌশল ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
“প্রবেশন হচ্ছে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির চরিত্র সংশোধনের এমন একটি ব্যবস্থা যেক্ষেত্রে আদালতের শর্তানুযায়ী একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে অপরাধীকে তার নিজ সমাজে জীবনযাপনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।”
প্রবেশনের শর্ত : প্রবেশন অফিসার বা সমাজকর্মী একজন ব্যক্তি আর্থসামাজিক, পারিবারিক, মানসিক ইত্যাদি অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন। এক্ষেত্রে সব ধরনের অপরাধী প্রবেশনের যোগ্য নয়। প্রবেশন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অপরাধপূর্ব আচরণ, বর্তমান মনোভাব, সামাজিক দিক ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। প্রবেশন মঞ্জুর অবশ্য বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত ।
নিম্নে প্রবেশনের শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. ভবিষ্যতে অপরাধ না করার অঙ্গীকার,
২. আদালতের অনুমতি ছাড়া পেশা ও বাসস্থান পরিবর্তন না করা,
৩. আদালতে নিয়মিত নির্দিষ্ট তারিখে হাজির হওয়া,
৪. প্রবেশন অফিসারের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করা,
৫. সকলের সাথে সদাচরণ করা,
৬. প্রবেশন অফিসারের নির্দেশাবলি মেনে চলা,
৭. আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশমালা মেনে চলা।
প্রবেশন ব্যবস্থার কর্মকৌশল
১. অনুসন্ধান : প্রবেশন ব্যবস্থা এবং প্রবেশন কার্যক্রমকে যথাযথভাবে কার্যকর এবং অর্থবহ করতে হলে সংশ্লিষ্ট
বিষয়ে বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান ও চিন্তাভাবনা করতে এবং তারই আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. ব্যক্তি হিসেবে বিচার : অপরাধী সম্পর্কে অনুসন্ধানটি তার একান্ত ব্যক্তিগত পর্যায়ে। প্রতিটি অপরাধীকে একজন ব্যক্তি হিসেবে বিচার করতে হবে এবং ঘটনার পার্থক্য বিচারে ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। প্রত্যেক অপরাধীর আর্থসামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানো প্রয়োজন।প্রবেশনে রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে অপরাধীর ব্যক্তিগত পরিবেশ, সমস্যা এবং তার মনোভাব সম্পর্কে নিবিড় অনুসন্ধান সফল প্রবেশন ব্যবস্থার একটি অন্যতম পূর্বশর্ত।
৩. সহযোগিতা : প্রবেশনাধীন কিশোর অপরাধীদের সামাজিক পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে বাড়ি এবং প্রতিবেশী উভয়ের সহযোগিতা কাজে লাগানো যেতে পারে। কেননা আদালত থেকে প্রত্যাবর্তনের পর সমাজে পুনরায় একীভূত হওয়ার প্রাক্কালে অপরাধী ব্যক্তির পরিবার, জ্ঞাতিগোষ্ঠী, প্রতিবেশী তথা স্থানীয় কোন সংঘ-সমিতির মনোভাব বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অপরাধীর চারপাশের মানুষ যদি সহানুভূতিপ্রবণ হয় তা হলে তার চারিত্রিক
সংশোধন এবং পুনর্বাসন কাজটি সহজ হতে পারে। অপরপক্ষে, অপরাধীর প্রতি তাদের বিরূপ এবং বিদ্রূপমূলক মনোভাব
অপরাধীকে ততটা সহজে পুনর্বাসন করতে পারে না। তাই পারিবারিক অবস্থা, পরিবার পরিজন, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতা প্রবেশনারের অনুকূলে আনার জন্য সব ধরনের প্রয়াস চালাতে হবে।
৪. অপরাধীর দৈহিক এবং মানসিক অবস্থা বিচারবিশ্লেষণ : অপরাধের কারণ এবং সংশোধনের ক্ষেত্রে অপরাধীর দৈহিক এবং মানসিক অবস্থা বিচারবিশ্লেষণ করতে হবে। বস্তুত প্রবেশন কর্মকর্তা তার তত্ত্বাবধান কাজে এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখেই অপরাধীকে সংশোধিত করার প্রয়াস চালাবেন। এ লক্ষ্যে নিবিড় কেইসওয়ার্ক পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী একটি কর্মপন্থা।
৫. অপরাধীর মন-মানসিকতা বিচার : প্রবেশনাধীন অপরাধীর সামনে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা কর্মসূচি তুলে ধরা প্রয়োজন। অ পরাধীর মন-মানসিকতা বিচারে তার জন্য প্রয়োজনীয় অথবা তার জন্য সংগতিপূর্ণ জীবনের একটি লক্ষ্য স্থির করে দিলে অপরাধী সে লক্ষ্য অর্জনে ক্রমে ক্রমে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় চিন্তা এবং কাজ করতে শিখবে।
৬. প্রশিক্ষণ : প্রবেশন কর্মকর্তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং অসাময়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে। কেননা তাঁদের অজ্ঞতা এবং দুর্বল ব্যক্তিত্ব অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধনের জন্য মোটেই অনুকূল হবে না।
৭. যোগাযোগ : অপরাধীদের সঙ্গে প্রবেশন কর্মকর্তার যোগাযোগ একদিকে যেমন বেশিদিনের ব্যবধানে হওয়া উচিত নয়, অন্যদিকে এই যোগাযোগ ঘন ঘন হওয়াও সমীচীন নয়।ঘন ঘন যোগাযোগে প্রবেশন কর্মকর্তার উপর অপরাধীর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং তার পক্ষে পুনর্বাসিত হওয়া সময়সাপেক্ষ অথবা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। অপরপক্ষে, যোগাযোগের ব্যবধান বৃদ্ধি পেলে অপরাধীর উপর প্রবেশন কর্মকর্তার প্রভাব কমে যাবে। এতে সংশোধনে ও পুনর্বাসনে বেশি সময় ব্যয় হবে। অতএব, এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে পরিদর্শন সূচি নির্ধারিত করতে হবে।
৮. চারিত্রিক উন্নতি : প্রবেশনাধীনকালে প্রবেশনারের চারিত্রিক উন্নতি সম্পর্কে প্রবেশন কর্মকর্তা আদালতের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট প্রদান করবেন। সে সাথে প্রবেশনার যাতে প্রবেশনের সুযোগ-সুবিধা সদ্ব্যহার করতে পারে সে জন্য প্রবেশন কর্মকর্তা তাকে সাহায্য করবেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, প্রবেশনাধীনকালে প্রবেশনার যদি ক্রমশ তার চারিত্রিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়, তাহলে তার অপরাধকে আর অপরাধ বলে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই। অপরপক্ষে, যদি সে চারিত্রিক উন্নতি আনয়নে ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করতে হবে এবং তার জন্য যথাযথ শাস্তি প্রদান করতে হবে। অতএব, লক্ষণীয় যে প্রবেশনের উদ্দেশ্য অপরাধীকে মুক্ত করে দেয়া নয়, বরং তাকে হয় সংশোধন করা নতুবা উপযুক্ত শাস্তির জন্য কারাগারে পুনরায় প্রেরণ করা।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/