অথবা, প্রতিবেদনের কাঠামো বিশ্লেষণ কর।
অথবা, প্রতিবেদনের কাঠামো আলোচনা কর।
অথবা, একটি উত্তম প্রতিবেদনের কাঠামো তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গবেষণার ফলাফলভিত্তিক প্রতিবেদন প্রণয়ন বিভিন্নভাবে হতে পারে। কেননা গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়নের চিরন্তন কোনো কাঠামো বা কৌশল নেই। বিভিন্ন সমাজ গবেষক বিভিন্নভাবে গবেষণা প্রতিবেদন কাঠামো বা নিয়ম অবলম্বন করেছেন ।
প্রতিবেদন কাঠামো : নিম্নে দু’জন সমাজ গবেষক বর্ণিত গবেষণা প্রতিবেদনের কাঠামোর স্বরূপ উল্লেখপূর্বক তার উপর ভিত্তি করে একটি সুন্দর প্রতিবেদনের কাঠামো উপস্থাপন করা হলো :
সি.ডব্লিউ. ইমোরি (C. W. Emory: 1989) তাঁর ‘Business Research Methods’ গ্রন্থে গবেষণা প্রতিবেদনের কাঠামো নিম্নোক্তভাবে বিধৃত করেছেন : ক. প্রারম্ভিক অংশ ১. গবেষণা শিরোনাম (Title) ২. গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের নাম (Name of the researcher and the institution)
৩. মুখবন্ধ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার (Preface and acknowledgement) 8. সূচিপত্র (Index)
খ. মূল অংশ ১. ভূমিকা : i. গবেষণার সমস্যা ও বিষয়বস্তু (Subject matter and problem of research) ii. উদ্দেশ্যাবলি (Objectives research) বিড়াজাজ iii. গবেষণার পূর্বানুমান (Hypothesis of research) ২. গবেষণা পদ্ধতি : i. নমুনা (Sample)
ii. উপাত্ত সংগ্রহের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি (Ingredients and instruments of data collection)
iii. গবেষণা নকশা ও প্রক্রিয়া (Research design and process) ৩. ফলাফল
৪. আলোচনা ও সুপারিশ (Discussion and recommendation) ৫. সারাংশ ও উপসংহার (Summary and conclusions) গ. নির্দেশিকা
১. নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি (Bibliography) ২. পরিশিষ্ট (Appendix) নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ক. প্রারম্ভিক অংশ : গবেষণা প্রতিবেদনের মূল অংশ শুরুর পূর্বে একটি আলংকারিক অংশ থাকে, যা প্রতিবেদনের কাঠামো সুদৃঢ় করে । এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো :
১. গবেষণার শিরোনাম : প্রতিবেদনের প্রথম ধাপ হচ্ছে শিরোনাম। গবেষণা প্রতিবেদন লেখার প্রথমেই প্রতিবেদনের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত একটি অর্থবহ ও সুন্দর শিরোনাম প্রদান করতে হয়। শিরোনামটি এমন হবে, যাতে গবেষণার মূল বিষয় ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয় এবং শিরোনামটি সুস্পষ্ট, যথাযথ ও সংক্ষিপ্ত হতে হবে। যেমন- পাবনার
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাঁত শিল্পের ভূমিকা : একটি সমাজতাত্ত্বিক সমীক্ষা।
২. গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের নাম : শিরোনামের নিচে গবেষকের নাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পদমর্যাদা ইত্যাদি লিখতে হয় । তাছাড়া প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, সাল এবং তারিখও উল্লেখ করতে হয়। ঠিকানা সংক্ষিপ্ত হলেও চলে। যেমন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা ।
৩. মুখবন্ধ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার : গবেষণা প্রতিবেদনে মুখবন্ধ লিখতে হয় । প্রতিবেদনের আকার ছোট হলে মুখবন্ধ না লিখলেও চলে । মুখবন্ধে সাধারণত বিষয় নির্বাচনের কারণ, সমস্যার রূপ-প্রকৃতি এবং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে । মুখবন্ধের পরে অপর পৃষ্ঠায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার থাকে । এক্ষেত্রে গবেষক যাদের সাহায্য-সহযোগিতা, পরামর্শ, আর্থিক সহায়তা নিয়েছেন তাদের নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন ।
৪. সূচিপত্র : প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে একটি সূচিপত্র প্রদান আবশ্যক, যাতে পাঠক অতি সহজে তা অনুধাবন করতে পারেন । কোন পৃষ্ঠায় কি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, কি কি নির্দেশাবলি রয়েছে অর্থাৎ অধ্যায়ভিত্তিক বিন্যাস সূচিপত্রে উল্লেখ করতে হয় ।
খ. মূল অংশ : গবেষণার মূল বিষয় এ অংশেই বিধৃত থাকে । এর কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। যেমন-
১. ভূমিকা : প্রতিবেদনের এ পর্যায়ে গবেষণা সম্পর্কে ভূমিকা প্রদান করতে হয় । এখান থেকেই পৃষ্ঠা নম্বর শুরু করতে হয় এবং এর পূর্বের পৃষ্ঠাগুলোতে রোমান নম্বর ব্যবহার করা হয়। সাধারণত প্রতিবেদনের ভূমিকায় গবেষণার সমস্যা ও বিষয়বস্তু পূর্বানুমান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে । তাছাড়া গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন শব্দ ও ধ্যা
ন-ধারণার সঠিক ও সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা এখানে উল্লেখ করা হয় ।
২. গবেষণা পদ্ধতি : ভূমিকা প্রদানের পরবর্তী ধাপে গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে । এ পর্যায়ে পদ্ধতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ নমুনার আকার, উপাত্ত সংগ্রহের উপকরণ ও যন্ত্রপাতি যেমন— প্রশ্নমালা, অভীক্ষা ইত্যাদি এবং গবেষণা নকশা ও প্রক্রিয়ার কথা এখানে উল্লেখ করতে হয়।
৩. ফলাফল : গবেষণার ফলাফল প্রতিবেদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশ। গবেষণার ফলাফল এ অংশে উপাত্ত সহকারে তুলে ধরা হয় । উপাত্ত উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যখন যেভাবে প্রযোজ্য সেভাবে ছক, চিত্র কিংবা সারণির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় । এ অংশে উপাত্ত বিশ্লেষণ করতে হয় এবং গবেষণার ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা সম্পর্কিত তথ্য-প্রমাণ হাজির করতে হয়।
৪. আলোচনা ও সুপারিশ : প্রতিবেদনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আলোচনা ও সুপারিশ । আলোচনা
অংশকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে । কেননা প্রাপ্ত ফলাফলের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গুরুত্ব এখানে বিধৃত করা হয় । তাছাড়া সমস্যা সমাধানে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে
সুপারিশমালাও এখানে লিপিবদ্ধ থাকে। গবেষণা পরিচালনায় কোনো সমস্যা বা ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হলে তাও এখানে উল্লেখ করতে হয় ।
গ. নির্দেশিকা : প্রতিবেদনের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে নির্দেশিকা । এর দুটি পর্যায় রয়েছে। যেমন-
১. নির্বাচিত গ্রন্থপঞ্জি : এ পর্যায়ে বিভিন্ন বই, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রবন্ধ, জার্নাল বা অপ্রকাশিত থিসিস কিংবা প্রন্থাবলি যা থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে লেখকের নামের সাথে বই বা প্রবন্ধের নাম, প্রকাশকের নাম, সাল, তারিখ, পৃষ্ঠা ইত্যাদি বর্ণমালার ক্রমানুযায়ী সাজিয়ে উল্লেখ করতে হয় ।
২. পরিশিষ্ট : গবেষণার মূল অংশে ব্যবহার করা হয়নি এমন কিছু তথ্য বা বিবিধ উপাদান এ পর্যায়ে উল্লেখ করতে হয়। ভবিষ্যতে যদি কোনো গবেষক এ নিয়ে কোনো গবেষণা করতে চান, তাহলে এসব তথ্য প্রমাণ তার কাজে লাগাতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, গবেষণার উদ্দেশ্য, গবেষণা প্রতিবেদনের পাঠক এবংn গবেষকের স্তরভেদে গবেষণা প্রতিবেদনের বর্ণনাকৃত কৌশলগুলো মেনে চললে একটি সুষ্ঠু প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব হয় এবং সমাজে তা গ্রহণযোগ্য হয়।