পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে বিবেচ্য বিষয়গুলো কী কী?
অথবা, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে লেখ।
অথবা, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনের মুখ্য বিষয়গুলো কী কী?
অথবা, পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয় সেগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে একজন সমাজকর্মী বিভিন্ন পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।
পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে গৃহীত ব্যবস্থা :
নিম্নে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. সাহায্যার্থীকে ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা : পেশাগত সম্পর্কের নীতি হলো ব্যক্তিস্বতন্ত্রীকরণ এবং তার কৌশল হিসেবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সমস্যাগ্রস্ত না ভেবে সমাজের একজন সদস্য মনে করে ব্যক্তির সহযোগিতায় এগিয়ে আসলে তার সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে।
২. অনুভূতির প্রকাশ ঘটানো : পেশাগত সম্পর্কের নীতি ছিল উদ্দেশ্যমূলক অনুভূতির প্রকাশ। এ নীতির ভিত্তিতে সমাজকর্মীরা শুধু সাহায্যার্থীর মনের ভাব প্রকাশের নীতি গ্রহণ করেছে, যাতে সাহায্যার্থী দ্বিধাহীন চিত্তে বলতে পারে।সমাজকর্মীর প্রকৃত তথ্য জানার ক্ষেত্রে এবং সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এ কৌশল অত্যন্ত কার্যকর।
৩. সমস্যার প্রতি সহানুভূতিশীল : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সমাজকর্মী তার প্রতি কোনোরূপ বিরাগভাজন বা নেতিবাচক মনোভাব যেন প্রকাশ না করে। কেননা সাহায্যার্থী সবসময় চায় তার সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে সমাজকর্মী যেন সবচেয়ে বেশি আগ্রহশীল হয় এবং কোনোভাবেই যেন তাকে অবহেলা না করে। এ নীতির ভিত্তিতে সমাজকর্মী এ ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
৪. মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি : সাহায্যার্থীর সমস্যার প্রেক্ষিতে সে কোনোভাবেই অপরের অবহেলার পাত্র হতে চায় না।সমাজকর্মী তাকে যতটা সম্ভব সাদরে গ্রহণ করবেন এবং আন্তরিকতা প্রদর্শন করবেন তার প্রতি যাতে সে বেশি আকৃষ্ট হয়। এ নীতিবোধকে সামনে রেখে ব্যক্তি সমাজকর্মে ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার কৌশল উদ্ভাবিত হয়েছে। যাতে সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি গ্রহণযোগ্য নীতির ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
৫. নির্বিচার দৃষ্টিভঙ্গি : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি সমস্যার কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করতে পারে, তাবার অপরাধমূলক কাজের জন্য সাহায্যার্থী বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় নানাবিধ সংকটে সাহায্যার্থী নিপতিত হতে পারে। আদেশ নিষেধ সঠিকভাবে পালন নাও করতে পারে। এসব দোষত্রুটি সত্ত্বেও তার প্রতি বিচারকের ভূমিকা পালন করা উচিত নয়।এরই ভিত্তিতে সমাজকর্মীকে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. পছন্দের যাচাই ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কৌশল : ব্যক্তি সমাজকর্মে সবসময় ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার পাশাপাশি তার নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ, ভালোমন্দ বলার ক্ষমতা এবং তার সমস্যা সমাধানে কর্মপন্থা নির্ধারণে তার নিজস্ব মতামত জানার চেষ্টা করা হয়।যাতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।
৭. তথ্য গোপনকরণ কৌশল : এ প্রক্রিয়ায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে গোপন তথ্যসমূহ যাতে প্রকাশিত না হয় এবং সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন না হয় এজন্য সমাজকর্মীগণ গোপনীয় নীতির ভিত্তিতে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান তথ্য গোপনকরণ কৌশল অবলম্বন করেছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত কৌশল বা ব্যবস্থা গ্রহণের ভিত্তিতে সমাজকর্মীগণ, সাহায্যার্থীর যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহ,সমস্যা নির্ণয় ও সমাধান করে থাকেন। সমস্যার ধরন, সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠানের সেবাদানের ধরন ও প্রকৃতি থেকে এ সমস্ত নীতি ও কৌশল অবলম্বন করা হয়। সমাযোজন ক্ষেত্রে এসব নীতি ও কৌশল সঠিকভাবে কার্যকর হয়। আবার কখনো এর ব্যতিক্রম ঘটে, তারপরেও ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্ত প্রক্রিয়ায় পেশাগত সম্পর্ক বা র‍্যাপো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। এজন্য একে The soul of case work বা ব্যক্তি সমাজকর্মের আত্মা বলা হয়।