পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বলতে কী বুঝ?

অথবা, সমাজকর্মের একটি মূল্যবোধ হিসেবে “পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ” নীতি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্মের একটি মূল্যবোধ হিসেবে “পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ” নামক মূল্যবোধটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্মের মূল্যবোধ হিসেবে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ধারণাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
প্রতিটি পেশার ন্যায় সমাজকর্ম পেশারও কতকগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। সমাজকর্মীদের এই মূল্যবোধ অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। মূল্যবোধ সমাজকর্ম অনুশীলনের Guideline বা Principle হিসেবে কাজ করে।
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ : সমাজকর্ম অনুশীলন সমাজকর্মীগণ কতকগুলো সাধারণ মূল্যবোধ অনুসরণ করেন।সমাজকর্মের এ সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ।
নিম্নে এ মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা হলো :
পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ (Mutual respectness) : কারো কথা বা আচরণ বিরক্তিকর ও আপত্তিকর হলেও তা সহ্য করার মতো ধৈর্য অর্জন করা হলো সহনশীলতা। আর মানুষের সামাজিক ভূমিকা পালন ও পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্মান প্রদর্শনই হলো শ্রদ্ধাবোধ । সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির, বিভিন্ন ধর্মের এবং বিভিন্ন মূল্যবোধের মানুষ বসবাস করে। ফলে সংগত কারণেই বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন আচরণ সমাজে পরিদৃষ্ট হয় । আচরণ ও মূল্যবোধের ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সামাজিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একে অপরের মূল্যবোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শন জরুরি। এর মাধ্যমে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সহজ হয়। আবার সামাজিক পরিচিতি ও মর্যাদা অনুযায়ী মানুষ সম্মান ও শ্রদ্ধা লাভের অধিকারী ।সমাজে অবস্থান অনুযায়ী মানুষ সম্মান না পেলে সে সমাজে আত্মমর্যাদা লোপ পেতে থাকে। ফলে মানুষ একে অপরের প্রতি দায়িত্ব পালনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, এতে সামাজিক বন্ধন শিথিল হয়ে পড়ে, মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয় এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হয়। যে সমাজে সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ অনুপস্থিত, সে সমাজ বিশৃঙ্খলতা, দায়িত্বহীনতা ও অপকীর্তির অভয়ারণ্যস্বরূপ । এ ধরনের সমাজে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলা সম্ভব হয় না এবং সামাজিক পরিবেশ হয় কলুষিত।ফলে সমাজে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে এবং উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এ কারণে সমাজকর্মে ‘পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃত। সমাজকর্মে পেশাগত সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করতেও এ মূল্যবোধের প্রয়োজন অনুভূত হয়। কেননা সমাজকর্মের সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন । আর এর জন্য সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থীর মধ্যে এ মূল্যবোধের অভাব ঘটলে পুরো সাহায্য প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। সমাজের ক্ষুদ্র গণ্ডি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই মূল্যবোধের চর্চা করতে হবে। এর অভাবে সমাজকাঠমোতে নানা ধরনের অসংগতি দেখা দিতে পারে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় নানা ধরনের ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে ।