অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে উল্লেখ কর।
অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বৈচিত্র্যময় পৃথবীতে পর্যবেক্ষণ করার অনেক কিছু বর্তমান । বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে পর্যবেক্ষণ ব্যবহৃত হয় । বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান ছাড়াও সামাজিক বিজ্ঞানে পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব অপরিহার্য । তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত দায়িত্বের পরিচয় দেয় এবং নির্ভুল তথ্যের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করে, যা গবেষণার জন্য অতি জরুরি ।
পর্যবেক্ষণ এর বৈশিষ্ট্যগুলো : সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল হিসেবে পর্যবেক্ষণের কতিপয় বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সে বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো :
১. চাক্ষুষ ঘটনা : পর্যবেক্ষণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তু বা ঘটনাকে কাছ থেকে বা দূর থেকে সতর্কতার সাথে চাক্ষুষভাবে দেখা হয়। এক্ষেত্রে কেবল শুনে কোন ঘটনা বা বিষয়কে অবলোকন করা হয় না। Moser and Kalton এর ভাষায়, “In the strict sense, observation implies the use of eyes rather than of ears and voice.”
২. সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য : পর্যবেক্ষণ হলো উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে ।
৩. পরিকল্পনা : যথাযথ পরিকল্পনা অনুসরণ করে পর্যবেক্ষণ পরিচালিত হয়। প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ ও লিপিবদ্ধকরণের জন্য কোন ধরনের যন্ত্রপাতি (Equipment) প্রয়োজন হবে তা পূর্ব থেকেই গবেষককে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন একটি সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করার জন্য ক্যামেরার দরকার । এটি গবেষকরে পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
৪. পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়াদি লিপিবদ্ধকরণ : পর্যবেক্ষণকৃত সবকিছু মনে রাখা একজন গবেষকের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন কাজ । তাই পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়বস্তু সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য (Information) তাৎক্ষণিকভাবে (immediately) লিপিবদ্ধ করা উচিত। এতে উপাত্তের সঠিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা (Validity) বৃদ্ধি পায় ।
৫. সরাসরি অধ্যয়ন : পর্যবেক্ষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এটি একটি সরাসরি অধ্যয়ন পদ্ধতি। এক্ষেত্রে গবেষক ব্যক্তিগতভাবে মাঠে উপস্থিত হয়ে গবেষণার উদ্দেশ্যসমূহ স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেন। এভাবে পর্যবেক্ষিত বস্তু এবং চোখের মধ্যে সরাসরি মিথস্ক্রিয়া (Interaction) ঘটে থাকে । ফলে বাস্তব উপাত্ত লিপিবদ্ধ (Record) করা যায় ।
৬. প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ : পর্যবেক্ষণ এমন একটি কৌশল যেটি কেবল প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে। কেননা এক্ষেত্রে প্রত্যেক গবেষক মাঠ পর্যায় থেকে গবেষণার সাথে সম্পর্কিত প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে ।
৭. সরাসরি কার্যকারণ সম্পর্ক : পর্যবেক্ষণ কৌশলের সাহায্যে কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণ নয়, বরং আচরণের সামাজিক পটভূমি এবং ক্ষেত্রবিশেষে কার্যকারণ সম্পর্ক সরাসরি জানা সম্ভব হয়।
৮. যথার্থ ও বিশুদ্ধ উপাত্ত : পর্যবেক্ষণ কৌশলের ক্ষেত্রে গবেষক সামাজিক ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত না করে অর্থাৎ মুক্ত
পরিবেশে স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণ ও কার্যকলাপ হুবহু অবলোকন করে থাকে। ফলে এ কৌশলের সাহায্যে সমাজ সম্পর্কিত যথার্থ বিশুদ্ধ ও অবিকৃত উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, পর্যবেক্ষণ কৌশলের উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকায় এ কৌশলের সাহায্যে সংগৃহীত উপাত্তসমূহের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতার (Validity and Reliability) মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে সামাজিক বিজ্ঞানসমূহের বিকাশে পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে ।