অথবা, পরিসংখ্যান কাকে বলে? পরিসংখ্যানের প্রকারভেদ আলোচনা কর।
অথবা, পরিসংখ্যান বলতে কী বুঝ? পরিসংখ্যান কত প্রকার ও কি কি? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের সংজ্ঞা দাও। পরিসংখ্যানের ধরনসমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : জ্ঞানবিজ্ঞানের যে কোনো শাখার ব্যাপ্তি কোনো একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞার মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। পরিসংখ্যান কি তা তখনই উপলব্ধি করা সম্ভব হবে, যখন আমরা এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারব ।
শাব্দিক অর্থে পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে Statistics । ল্যাটিন শব্দ Status বা ইতালীয় শব্দ Statista বা জার্মান শব্দ Statistik থেকে Statistics শব্দের উৎপত্তি। Statistics শব্দের বাংলা পরিভাষা হচ্ছে পরিসংখ্যান, যার অর্থ সংখ্যাত্মক তথ্য বা সংখ্যা নিয়ে গবেষণালব্ধ বিজ্ঞান ।
সাধারণ অর্থে : পরিসংখ্যানকে সাধারণত সংখ্যাত্মক তথ্য এবং সংখ্যা নিয়ে গবেষণার বিজ্ঞান বলা হয়ে থাকে । কেউ কেউ পরিসংখ্যানকে সংখ্যাত্মক তথ্য আবার কেউ কেউ সংখ্যাত্মক পদ্ধতি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ বিভিন্নভাবে পরিসংখ্যানের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকটি দেওয়া হলো :
Webstar এর মতে, “পরিসংখ্যান বিজ্ঞান হলো একটি রাষ্ট্রের জনসাধারণের অবস্থা সম্পর্কিত শ্রেণিবদ্ধ তথ্যাবলি । বিশেষ করে সেসব তথ্য যা সংখ্যায় বা শ্রেণিবিন্যাসের মাধ্যমে বা অন্য যে কোনো আকারে বিবৃত করা যায় ।”
Bowley এর মতে, “পরিসংখ্যান হলো কোনো ঘটনার সংখ্যাত্মক বর্ণনা, যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে।”
R. A. Fisher এর মতে, “পরিসংখ্যান বিজ্ঞান হলো ব্যবহারিক গণিতের একটি শাখা, যা সংখ্যাত্মক তথ্যসংগ্রহ ও বিশ্লেষণে প্রয়োগ করা হয়।”
Professor Achenwall এর মতে, “পরিসংখ্যান হলো কতকগুলো রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় বিজ্ঞান।”
W.I. King এর মতে, “পরিসংখ্যান হচ্ছে কোনো অনিশ্চিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিজ্ঞান।” বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদের দেওয়া সংজ্ঞাগুলো থেকে বুঝা যায় যে, পরিসংখ্যান এমন একটি বিজ্ঞান, যার সাহায্যে সংখ্যা বিশ্লেষণ করে তত্ত্ব উদ্ঘাটন করা যায় ।
পরিসংখ্যানের শ্রেণিবিভাগ : ব্যবহার কৌশলগত দিক দিয়ে পরিসংখ্যান পদ্ধতিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা :
১. বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান,
২. অনুমান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান এবং
৩. ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত পরিসংখ্যান ।
নিম্নে এগুলোর বর্ণনা দেওয়া যথা :
১. বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান : বর্ণনামূলক পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে পরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত বিপুলসংখ্যক বিশৃঙ্খলিত উপাত্তকে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করে সেগুলোর নানারকম বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করা হয়। এ ধরনের পরিসংখ্যান পদ্ধতি কেবল একগুচ্ছ চলের গাণিতিককেই পরিমাপ করে না, বরং একগুচ্ছ চলের সাথে আর একগুচ্ছ চলের সম্পর্ক কেমন তাও পরিমাপ করে ।
২. অনুমান সংক্রান্ত পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যানের আর একটি কাজ হলো অল্পসংখ্যক ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে বিরাট জনসংখ্যা সম্পর্কে অনুমান করা। ধরা যাক, বাংলাদেশের সব কিশোরদের গড় উচ্চতা কত? এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলকে নমুনা হিসেবে গ্রহণ করে তাদের গড় উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। তাদের গড়কেই বাংলাদেশের সব কিশোরদের গড় উচ্চতা ধরা হয়। পরিসংখ্যানে একটি বা কয়েকটির ফলাফলকে অনেক রাশির ফলাফল হিসেবে অনুমান করা হয় ।
৩. ভবিষ্যদ্বাণী সংক্রান্ত পরিসংখ্যান : পরিসংখ্যানের ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে করা হয়? মনে করি, বিপুলসংখ্যক লোকের দু’টি গুণাবলির পরিমাপের মধ্যে কতটুকু সম্পর্ক সেটা জানা আছে। যেমন- মনে করি, x হলো কলেজের পরীক্ষায
় মনে একজনের সাফল্যের পরিমাপ এবং y হলো বুদ্ধির পরিমাপ । এখন আমরা একজন নতুন ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম, যার শুধু x এর পরিমাপ অর্থাৎ, কলেজের পরীক্ষার ফল আমাদের জানা আছে এবং x অংক থেকে আমাদের উক্ত ব্যক্তির y সম্বন্ধে ধারণা বা ভবিষ্যদ্বাণী করতে হবে। দু’টি চল বা গুণাবলি সম্পর্কে অতীত অভিজ্ঞতা ও একটি চলের পরিমাপ থেকে অন্য একটি চলের পরিমাপ সম্বন্ধে ধারণা করার নামই
ভবিষ্যদ্বাণীকরণ । যেসব গাণিতিক পদ্ধতিতে এ সমস্যা সমাধান করা হয়, তাদের পূর্বানুমান বা রিগ্রেশন বলা হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোন জিনিসের বর্ণনা, অনুমান ও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। এজন্যই পরিসংখ্যানের অত্যন্ত আবশ্যক, কেননা এগুলোর মাধ্যমেই আমরা উপারউল্লিখিত বিষয়সমূহে অবগত হই।