উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ আধুনিক রাষ্ট্রজীবনে পরিবার পরিকল্পনা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। পরিকল্পিতভাবে পরিবারের গঠনই গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। পরিকল্পিতভাবে পরিবারের গঠনই হচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা। পরিবার পরিকল্পনা ব্যতীত সুন্দর ও সুখী পরিবার গঠন করা সম্ভব নয়। তাই আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে পরিবার পরিকল্পনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশেও স্বাধীনতার পরে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বেশ গতিশীলতার সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণ অর্থে : কোনো রাষ্ট্রে পরিকল্পিত উপায়ে পরিবারের আকার ছোট রাখার প্রক্রিয়াকেই পরিবার পরিকল্পনা বলে গণ্য করা হয়। এটি মূলত পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় মোট আয়ের মূল্যায়ণে। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্তান জন্মদান দম্পতির ইচ্ছামতো একটা সময়ে হওয়া।
ব্যাপক অর্থে ঃ ব্যাপক অর্থে পরিবার পরিকল্পনা বলতে মূলত এমন এক পদ্ধতিকে নির্দেশ করে যাতে পরিবারের স্বাস্থ্য, সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি মিল রেখে পরিকল্পিতভাবে ছোট পরিবার গঠিত হয়ে থাকে। জনবহুল রাষ্ট্রে এটির প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি বলে প্রতিভাত হয়ে থাকে।
→ প্রামাণ্য সংজ্ঞা ঃ পরিবার পরিকল্পনার বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণী ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মতামতের আলোচনা নিম্নরূপ : বাংলাদেশ ফার্টিলিটি রিসার্চ কর্মসূচির পরিচালক ডাঃ হালিদা হানুম আখতার এর ভাষ্য মতে, “একটি পরিবারের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির লক্ষ্যে একটি দম্পতি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সচেতনভাবে চিন্তাভাবনা করে যে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করে তাকেই পরিবার পরিকল্পনা বলা যায়। সমাজকর্ম অভিধানের সংজ্ঞানুযায়ী, “পরিবার পরিকল্পনা হচ্ছে প্রজনন সম্পর্কে সুচিন্তিত ও সপ্রণোদিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, “পরিবার পরিকল্পনা চিন্তা ও জীবনধারণের এমন এক পদ্ধতি যা কোনো ব্যক্তি বা দম্পতি স্বীয় জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করে। যা পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ ত্বরান্বিত করে কোনো দেশের সামাজিক উন্নয়নে ফলপ্রসূভাবে অবদান রাখে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এর মতে, “পরিবারের কল্যাণ ও উন্নতির লক্ষ্যে দম্পতি যদি চিন্তাভাবনা করে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্ত
বায়ন করে তবে তাকেই পরিবার পরিকল্পনা বলে।”
→ মূলকথা : পরিবার পরিকল্পনা বলতে একটি পরিবারের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সদস্যদের শিক্ষা, খাদ্য বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, বিনোদন প্রভৃতির নিশ্চয়তা বিধান করার ব্যবস্থাকে বুঝায়। যা সমাজ উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উপসংহার। পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা একে যুগান্তকারী কার্যক্রম। যার সহায়তা সুখী ও সুন্দর পরিবার গঠনের পাশাপাশি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন সম্ভবপর হয়ে উঠে। পরিকল্পিত উপায়ে একটি পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে গৃহীত কার্যক্রমকেই পরিবার পরিকল্পনা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই পরিবার
পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক বেশি।