উৎস : ব্যাখ্যেয় পদ্যাংশটুকু মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত ‘ আত্মবিলাপ ’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে ।
প্রসঙ্গ : এখানে মানুষের জীবনের ক্ষণস্থায়িত্বের কথা কবি উপমাসহকারে ব্যক্ত করেছেন ।
বিশ্লেষণ : আশা মানুষের জীবনের প্রধান নিয়ামক শক্তি । আশা আমাদের হৃদয়ে প্রেরণার দীপ হয়ে জ্বলে । এ আশাই মানুষকে সম্মুখের দিকে চলতে শেখায় । আশা না থাকলে মানুষের জীবন গতিহীন হয়ে পড়ত । মানুষ এ কারণে আশায় বুক বেঁধে বাঁচে এবং নিয়ত আশার পিছনে ছোটে । এভাবে তার প্রমত্ত মন ছুটতে ছুটতে গতায়ু হয়ে পড়ে । মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী । চিরকাল বেঁচে থাকে না সে । জীবনের নেই কোন নিশ্চয়তা । দুর্বাদলের পাতার উপরস্থিত জলবিন্দু যেমন যে কোন মুহূর্তে নাড়াচাড়া লেগে পড়ে গিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে যায় মানুষের জীবনটাও তদ্রূপ । জল ভর্তি করার সময় কলসীর মুখে যে বুদ বুদ সৃষ্টি হয় তার যেমন কোন স্থায়িত্ব নেই মানুষের জীবনেরও তেমনি কোন নিশ্চয়তা নেই । মানুষের জীবন অনন্তকালের পটভূমিতে ঐ দুর্বাদলের জলবিন্দু ও কলসীর বুদবুদের মতই ক্ষণস্থায়ী । অথচ এ চরম সত্যটি জানা থাকা সত্ত্বেও মানুষ আশার পিছনে ছুটে ছুটে জীবন – যৌবন শেষ করে চলেছে । জীবনের শেষ স্তরে এসে সে যখন লাভ – লোকসানের হিসেবে বসে তখন আক্ষেপ করা ছাড়া আর গত্যন্তর থাকে না তার । তখন আত্ম – বিলাপে মুখরিত হয় তার অন্তরাত্মা ।
মন্তব্য : জীবন নিতান্তই ক্ষণস্থায়ী । শিশিরের মতই নিঃশব্দে জীবনটা কালের পটভূমিতে বিলীন হয়ে যায় । প্রতি নিয়ত জীবনের আয়ু শেষ হতে থাকে ।