“নারিলি হরিতে মণি , দংশিল কেবল ফণী এ বিষম বিষজ্বালা ভুলিবি , মন , কেমনে । ” — ব্যাখ্যা করা

উৎস : ব্যাখ্যেয় পদ্যাংশটুকু মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বিরচিত ‘ আত্মবিলাপ

প্রসঙ্গ : অর্থ সম্পদ লাভ করতে গিয়ে মানুষকে যে হতাশার গ্লানিতে নিমগ্ন হতে হয় সে সম্পর্কে কবি উল্লিখিত মন্তব্য করেছেন ।

বিশ্লেষণ : “নিত্য নিয়ত সামনের দিকে যাওয়ার আশায়, মানুষ দুর্বার গতিতে অগ্রসর হতে থাকে। আশার পিছনে পিছনে ছুটে চলা তার জীবনকে উৎসাহী এবং প্রগাঢ় করে তোলে। তার ব্যাকুল হৃদয় অর্থ, যশ, এবং প্রতিষ্ঠার লোভে অবল্লীন হয়ে থাকে। কিন্তু, ফুল তুলতে গিয়ে কেবল কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার মধ্যে তার সঙ্গে আসা কষ্টের অধিকারিতা থাকে। ফুলের সন্ধানে তার হাত শূন্য থাকে। মানুষ আশার ছলনায় ভুলে যায় যে, সাপের মাথার মূল্যবান মণি আহরণের জন্য হাত বাড়াচ্ছে, কিন্তু সে মনে রাখতে হয় যে, মণির বদলে সাপের দংশনে তার সকল শারীরিক অসুস্থতা উত্পন্ন হয়ে উঠতে পারে। এই বিষের যন্ত্রণা ভোগ করতে তাকে বাকি জীবন বিপদমূলক করতে হয়। যে সুখের আশায় সে সারাজীবন মরীচিকার পিছনে ছুটে সে সুখ নামের সোনার হরিণটির সন্ধান পায় না। এ অবস্থায় ব্যর্থতার আক্ষেপে তার অন্তরাত্মা উদ্গত হয় এবং আত্মবিলাপ শুরু হয়। আত্মবিলাপের আহাজারিতে তার সমস্ত আকাশ মুখরিত হয়। জীবনে নেমে আসা সুখের বদলে তাকে দুঃখের তীব্র দহন হয় এবং এই দহন কুরে কুরে তার জীবন অবশ্যই খায়। এ জ্বালাকে আর হজম করা সম্ভব নয় এবং তার মাধ্যমে সে তার ভুল থেকে পারে না।”

মন্তব্য: আশা মানুষকে সারাজীবন ঘুরিয়ে মারে । অবশেষে আশা পূরণ না হবার যন্ত্রণা বিষময় হয়ে উঠে । তখন আক্ষেপ করা ছাড়া তার কোন উপায় থাকে না । তার প্রমত্ত মন বিষের জ্বালায় জর্জরিত হতে থাকে ।