নির্বোধ মানুষের অহঙ্কারের অন্ত নাই, সে যাহার সৃষ্টি, তাহাকেই সে বন্দী করতে চায়, শাস্তি দিতে চায়।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : দাম্ভিক রাজশক্তির ঔদ্ধত্যকে চূর্ণ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে কবি এখানে স্রষ্টার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেছেন
বিশ্লেষণ : স্রষ্টা সর্বশক্তিমান। নির্বোধ মানুষ কোন কোন সময় একথা বুঝতে চায় না, মানতে চায় না। শক্তি এবং ক্ষমতার দাপটে রাজশক্তিও নিজের অহঙ্কার প্রকাশ করতে কসুর করে না। সবকিছুকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, সবকিছুই তার অধীন মনে করে। কখনো কখনো রাজ্যের মানুষকে মনে করে দাসানুদাস হিসেবে। যাদের খাজনা বা ট্যাক্সের টাকায় রাজার দিন গুজরান হয়, সে প্রজারাই যেন তাদের ভৃত্য এমন দাম্ভিকতা প্রকাশ করে কথা ও কাজে। অর্থসম্পদ আহরণে এবং ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি রাজশক্তির অমানবিক আচরণ সীমাহীন। অথচ স্রষ্টার কৃপায়ই তাদের রাজশক্তি হওয়ার সুযোগ এসেছে। ন্যায়, সত্য ও সুন্দরের আরাধনা করবে- এটাই ছিল তাদের ব্রত। জনগণের সেবক হয়ে তারা জনগণের কল্যাণ সাধন করবে এটাই ছিল অঙ্গীকার। কিন্তু তারা কোন ব্রত, কোন অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। উল্টো যেসব সচেতন মানুষ স্রষ্টার সত্য-সুন্দরের অনুরাগী, অসত্য-অন্যায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে, তাদেরকেই কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য রাজশক্তি বদ্ধপরিকর। কবি জনগণের কাতারে থেকে জনগণের অধিকার ও মর্যাদার কথা উচ্চারণ করেছিলেন বলেই রাজা তাঁকে কারাগারে পুরেছেন। ন্যায় ও সত্যকে আসামি করে তাঁর কণ্ঠরোধ করার জন্য বন্দী করা হয়েছে। প্রকারান্তরে যিনি সত্য সুন্দরের স্রষ্টা, দাম্ভিক ব্রিটিশ রাজশক্তি তাঁকেই বন্দী করে রেখেছে। তারা নির্বোধ বলেই এমন অহঙ্কার দেখাতে পেরেছে, ক্ষমতা প্রদর্শন করে নিজের বাহাদুরি প্রকাশের অপচেষ্টা করেছে।
মন্তব্য: নির্বোধ মানুষ দত্ত বা অহঙ্কার প্রকাশ করে নিজের অপকর্ম এবং দুর্বলতা ঢাকবার জন্যই। তাই বলে স্রষ্টাকে বন্দী করার বা শাস্তি দেয়ার ঔদ্ধত্য প্রকাশ করা তার উচিত নয়।