“নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধন (সিডও) বস্তুতপক্ষে একটি নারী অধিকার সনদ”-তোমার মতামত দাও।

অথবা, “CEDAW প্রকৃতপক্ষে একটি নারী অধিকার দলিল।” উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
উন্নয়নে নারী যুগ যুগ ধরে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে তার যথাযথ স্বীকৃত দান। সমাজ, রাষ্ট্র তথা সমগ্র বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতা স্থাপন করা। এর জন্য আইন প্রণয়ন ও আইনের সংস্কার এবং আইনের প্রয়োগের উপযুক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে। সিডওই হলো প্রথম বৈশ্বিক উপাদান যা নারী ইস্যুকে পূর্ণরূপে চিহ্নিত করেছে এবং নারী ও পুরুষের সমতাকে এগিয়ে নেয়ার পথ প্রদর্শন করেছে।
সিডিও সনদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য : নিম্নে সিডিও সনদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো :
১.এ যাবৎ কালে গৃহীত বিভিন্ন জাতিসংঘ চুক্তি, সনদ, ঘোষণার মধ্যে শিশু অধিকার সনদের পর সিডিও সনদই ‘ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দেশ কর্তৃক অনুমোদিত সনদ।
২. সিডিও হচ্ছে একমাত্র আন্তর্জাতিক সনদ যা নারীর মানবাধিকার সংক্রান্ত।
৩. সিডিও সনদ নারীর প্রতি বৈষম্য বলতে কি বুঝায় তা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। নারীর প্রতি বৈষম্যের অর্থ পরিধি এখানে সুনির্দিষ্ট ও সম্প্রসারিত করা হয়েছে।
৪. রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকৃত সমতা অর্জনের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও সনদে বলা হয়েছে।
৫. মানবাধিকার সম্পর্কিত অতীতের গতানুগতিক দলিলের বিপরীতে সিডিও সনদ আরো ইতিবাচক তৎপরতা রূপ সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ অনুমোদন করে।
৬. সিডিও সনদের বিধি ব্যবস্থা নর-নারীর উভয়ের জন্য প্রযোজ্য জীবনের সাধারণ ক্ষেত্রগুলোতেই কেবল সমতা নিশ্চিত করে না, বরং তা ব্যক্তিগত ও নাগরিক জীবনেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
৭.নারী ও পুরুষের মধ্যে দ্রুত সমতা স্থাপনের জন্য এবং জেন্ডার বৈষম্যকে মদদদানকারী প্রচলিত সামাজিক সাংস্কৃতিক চর্চা ও রীতিনীতি পরিবর্তনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে সিডিও ।
৮.লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি বা বয়স নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রে অধিকার যে একটি মৌলিক মূল্যবোধ এ ধারণাটি প্রথম সিডিও সনদে তুলে ধরা হয়েছে।
৯. সিডিও সনদ দারিদ্র, বর্ণবাদ, সশস্ত্র সংঘাত ও উন্নয়নের বৃহত্তর প্রেক্ষিতে পুরুষ ও নারীর সমতাকে ব্যাখ্যা করেছে।
১০. কোন ব্যক্তিগত বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নারীর প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্বের প্রয়োজনীয়তা এ সনদ তুলে ধরেছে।
১১. সিডিও সনদই প্রথম জনজীবন এবং ব্যক্তিগত জীবন উভয়ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার উপর সমান গুরুত্ব প্রদান করেছে।
১২. জনজীবন ও সমাজে পুরুষের মত নারীরাও যেন সমভাবে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে, সে জন্য সিডিও সনদ নারীর নাগরিক ও আইনগত সমতা নিশ্চিত করতে চায়।
১৩. সিডিও সনদ সন্তান জন্মদান ও লালন পালনের জন্য নারীরা যেন কোণঠাসা না হয়, সে জন্য নারীর প্রজনন ভূমিকাকে সামাজিক ভূমিকা হিসেবে গণ্য করে এবং নারীর প্রজনন অবদানকে স্বীকৃতি দেয়।
১৪. নারীকে গৎবাধা ভূমিকায় আবদ্ধকারী সব প্রচলিত আচার, প্রথা, রীতিনীতি, চর্চা, সংস্কার, বিধি ইত্যাদিকে নির্মূল করার দাবি জানায় সিডিও সনদ।
১৫. সিডিও সনদ ৩টি পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত নীতির উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয়েছে। এগুলো হলো-
(১) সমতার নীতি (Principle of equality) যার মধ্যে রয়েছে সুযোগ এবং সুফল লাভের ক্ষেত্রে সমতা
(২) বৈষমহীনতার নীতি (Principle of non discrimination) এবং (৩) রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা বা বাধ্যবাধকতার নীতি (Principle of state obligation)।
১৬. সিডিও সনদ মানবাধিকার কাঠামোতে পারিবারিক পরিমণ্ডলকে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণপদক্ষেপ। উপর্যুক্ত প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারি যে, সিডিও’ সনদের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নারীর বৈষম্য দূর করা এবং নারীর যাবতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার একটি সনদ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সিডিও সনদের মূল কাজ হলো মানব সমাজ, সভ্যতা বিকাশ ও উন্নয়নে নারীর যে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে তার যথাযথ স্বীকৃতি দান। সমাজ রাষ্ট্র তথা সমস্ত বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে সমতা স্থাপন করা। মানুষ হিসেবে নারীর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ গড়ে তোলা।