নারীনির্যাতন রোধ কল্পে বিভিন্ন বাধাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, নারীনির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
নারীনির্যাতন পৃথিবীর প্রাচীন একটি বিষয়। গ্রিস দেশে নারীর অধস্তন অবস্থা ছিল একধরনের নারী নিষ্পেষণ। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এ নির্যাতন ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। মানসিক নির্যাতন থেমে সামাজিক, রাজনৈতিক, জৈবিক, শারীরিক নানা রূপে নারীনির্যাতিত হয়। নির্যাতন রোধকল্পে প্রচেষ্টাও থেকে থাকে নি। নানামুখী নারীবাদীতাত্ত্বিক গোষ্ঠী, সরকার, প্রশাসন, বেসরকারি সংস্থা, জাতিসংঘ, সামাজিক সংগঠনসমূহ, তত্ত্ব, আইন, সনদ, বিধি ইত্যাদি প্রণয়ন করে নারী নির্যাতন বন্ধের প্রয়াস চালাচ্ছে। কিন্তু সমাজ ও পরিবারে বিদ্যমান রক্ষণশীল মানসিকতা নির্যাতন বন্ধের পদক্ষেপগুলোকে সফলতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
নারীনির্যাতন বন্ধে প্রতিবন্ধকতাসমূহ : বাংলাদেশে নারীদেরকে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন থেকে সুরক্ষার লক্ষ্যে আইন প্রণীত হয়েছে। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় নি। আইনকে ফাঁকি দিয়ে অপরাধী সাজা না পেয়ে ছাড়া
পেয়ে যায়। যৌতুক বিরোধী আইন, পারিবারিক আদালত বিধিমালা, নারীনির্যাতন বিবর্তনমূলক অধ্যাদেশ বাস্তবে আশানুরূপভাবে কার্যকর হয় নি। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান। তা হলো :
ক. জারিকৃত আইনের অধ্যাদেশের গঠন কাঠামোগত দুর্বলতা।
খ. প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অবকাঠামো ও প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব।
গ. নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমগ্র সমাজের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অনুপস্থিতি।
ঘ. শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে নারীরা এসব আইন থেকে সুযোগ সুবিধা পেতে সক্ষম হয় না।

ঙ. বাংলাদেশের সংবিধানের আইনের ছত্রছায়ায় নারীদের সমতা নিশ্চিত করা হয় নি এবং দেশে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য অনেক। ফলে নির্যাতন বন্ধ হয় নি।
চ. বাংলাদেশ সরকার কিছু কিছু মুখ্য বিষয় সংরক্ষিত করে CEDAW সনদে সম্মতি প্রদান করেছে। এ সংরক্ষিত বিষয়গুলো হলো ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আইন।
ছ. পারিবারিক নির্যাতনকে অপরাধ হিসেবে এখনো আইনগতভাবে স্বীকার করা হয় নি।
জ. এমন কোন লিঙ্গভিত্তিক নীতি প্রণীত হয় নি, যার দ্বারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসাম্য দূরীভূত হতে পারে অথবা কর্মক্ষেত্রে নির্যাতন বা Violence সম্পূর্ণভাবে রোধ সম্ভব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সারা দেশে ক্রম প্রসারমান নারী নির্যাতনের পথ কেবল সমঅধিকার দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। এ ব্যাপারে প্রতিটি নারীকে ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হয়ে উঠতে হবে এবং সচেতন করে গড়ে তোলার জন্য সামাজিক আন্দোলনসহ নারী সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও শিক্ষিত সচেতন, মানবতাবাদী, উদার, মুক্তচিন্তার অধিকারী সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই প্রতিটি রাষ্ট্রেরই উচিত নারী নির্যাতনের কারণ, ফলাফল ও প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে সবাইকে সম্পূর্ণরূপে অবহিত করা, যাতে এসবের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়।