নয়া বা নব্য উপনিবেশবাদ কী?

অথবা, নয়া বা নব্য উপনিবেশবাদ বলতে কী বুঝায়?
অথবা, নব্য উপনিবেশবাদের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, নব্য বা নয়া উপনিবেশবাদ কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
উপনিবেশবাদ এবং নব্য উপনিবেশবাদ মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। নব্য উপনিবেশবাদ বলতে উপনিবেশবাদের নতুন রূপকে বুঝায়। একে পুরনো বোতলে নতুন মদের সাথে অনেকটা তুলনা করা যায়। বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রসমূহ সম্মিলিতভাবে নব্য ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বদা মত্ত হয়ে উঠেছে। নয়া বা নব্য উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism) : নব্য উপনিবেশবাদ বাণিজ্য ও সাহায্য নীতির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম এক মাধ্যম। এশিয়া ও আফ্রিকার মতো অনেক রাষ্ট্র ঔপনিবেশিক ছোবল থেকে
নিজেকে মুক্ত করলে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ রাষ্ট্রগুলোর উপর বিভিন্ন কৌশল যেমন- অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করে। এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টার নাম নব্য উপনিবেশবাদ । অধ্যাপক চার্লস (Prof. Charles) এর মতে, নব্য উপনিবেশবাদ বলতে অন্য দেশের স্বাধীনতার উপর প্রত্যক্ষ বা
পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণকে বুঝায়।” ‘Oxford Dictionary of Sociology’ এর ভাষায়, “A term often applied to the economic situation of many former colonies after political independence has been secured.” বি.জি. হুয়েন বলেছেন, “একটি দেশের উপর অন্য দেশের যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবই হচ্ছে নব্য উপনিবেশবাদ ।” জোহান গালতুং বলেছেন, “নব্য উপনিবেশবাদ হলো বিভিন্ন জনগণের মধ্যে এক ধরনের আধিপত্যের সম্পর্ক। (A relation among the various people on the base of powerity) উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোকে বৃহৎ রাষ্ট্রের অধীনে রেখে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি দিক থেকে শোষণ করার এ নতুন পদ্ধতিকে নয়া উপনিবেশবাদ বলা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নতুন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে সাবেকি ধারায় ঔপনিবেশিক শাসন এবং শোষণ বজায় রাখা কোনভাবেই সম্ভব নয়। এ কারণেই ঔপনিবেশিক শোষণ এবং প্রাধান্য
বিস্তারের উদ্দেশ্যকে বজায় রাখার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। এ নতুন ধারায় পুরনো ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার ব্যবস্থাই হলো নব্য উপনিবেশবাদ (Neo-Colonialism)।